মুনিয়া, আমাদের সমাজের দগদগে ক্ষত ও রাষ্ট্রযন্ত্র …… “হাঙরের ঢেউয়ে খেয়েছিলো লুটোপুটি ” মুনিয়াকে নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে জীবনানন্দের কবিতার লাইনটি মনে পড়ে যায়। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার দগদগে ক্ষত আর রাষ্ট্রের লিঙ্গভিত্তিক দুঃসহ বৈষম্য বছরের পর বছর দেখেই আসছি। এ দগদগে ক্ষত ও বৈষম্য এ শতাব্দীতে আরও প্রকট। হাঙরের মত সমাজে নারীকে কতভাবেই না আত্মাহুতি দিতে হয়। হাজার বছর আগে চীনা কবি ফু সোয়ান ( Fu Hsuan) নারীর অবস্থা ও অবস্থানের বিষয়ে লিখেছেন, “How sad it is to be a woman Nothing on earth is held so cheap” (নারী হওয়া কত দুঃখের বিষয়, পৃথিবীতে আর কিছুই এত সস্তা নয়।)
এতো এতো সভ্যতার জয়ধ্বনি শুনি, শুনতে পাই নারীর ক্ষমতায়নের জিগির, ইকুউলিটির বুলি, তবু শত নিপীড়ন, শোষণ,লাঞ্ছনার মাঝে থেকে নারীকে নৃশংসভাবে মরতে হয়। বর্তমান সমাজ ও ধর্ম পুরুষদের জন্য এমন এক ব্যবস্থা করে রেখেছে যে, নারীর প্রতি নগ্ন অত্যাচার বা সহিংসতা চোখে পড়েনা। চোখে তো পড়েই না বরং অভিযোগের আঙুলটা নারীর দিকেই ঘুরেফিরে যায়। রাষ্ট্র পুরুষের শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্যকে মহিমান্বিত করেছে। আমাদের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে রয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বত্র নারী পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করিবে’। আমাদের রাষ্ট্র মুনিয়াদের জন্য শিক্ষা, সম্পত্তির সমান মালিকানা, কাজের সুযোগ, শ্রম বাজারে অবস্থান, চাকুরী সম্পর্কে পরিবার ও সমাজের মনোভাব আজও ঠিক বা নিশ্চিত করতে পারেনি। রাষ্ট্র মুনিয়াদেরকে পুরুষের সমকক্ষ করেনা।
সমাজ ও ধর্ম মুনিয়াদের অবজ্ঞা করে। মুনিয়ারা সমান হবে কেন! তারা মাথা নিচু করে থাকবে। নতজানু হবে পুরুষতান্ত্রিকতার পদতলে! মুনিয়ারা এ সমাজ ও রাষ্ট্রে অবিরাম হাঙরের ঢেউয়ে লুটোপুটি খায়। হাঙরসম এ রাষ্ট্র ও সমাজ মুনিয়াদের নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। এ দগদগে ক্ষত বা ঘা শুকাতে মুনিয়াদের আর কত জীবন দিয়ে যেতে হবে, মুনিয়াদের আর কত আর্তনাদ শুনে এ সমাজ রুখে দাঁড়াবে, আর কতকাল মুনিয়াদেরকে হাঙরের হিংস্রতা দেখতে হবে, মুনিয়ারা কি মায়ের কোলের মতো নিরাপদ সমাজ ও রাষ্ট্র পেতে পারেনা?
আল আযম খান ১ মে ২০২১