অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস তৈরির তালিকায় নাম দিতে হলে ২০ হাজার করে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) জেলা প্রশাসকের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সাবেক কমান্ডার মোসলিম আলী হাওলাদার এ অভিযোগ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, দ্বিতীয় পর্যায়ে সারাদেশের মতো তালতলী উপজেলা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস তৈরির জন্য তালিকার চাহিদা চেয়ে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেন। পরে জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ২০ জানুয়ারি অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারের ঘরের তালিকা করে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চিঠি পেয়ে ইউএনও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা দাবিকৃত অর্থ দিতে রাজি হননি। এ কারণে গত ৩০ জানুয়ারি বীর নিবাসের তালিকার চাহিদা তৈরির সভা ডেকেও অজ্ঞাত কারণে তা মূলতবি করেন ইউএনও। একপর্যায়ে দাবিকৃত অর্থ না পেয়ে ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের ঘরের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি বলে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের কাছে এসব অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি, বিদ্রুপ ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবন সাজসজ্জা না করে ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সোমবার প্রশাসনের ঐতিহাসিক ‘৭ই মার্চ’ উদযাপন অনুষ্ঠান বর্জন করেন তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার আজিজ আকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার ফরাজী, হরিপদ সরকার ও ইউনুস বিশ্বাসসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, ইউএনও কাওসার হোসেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নয়। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি করেন। প্রায়ই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অসম্মান করেন। জাতীয় কোনো দিবসে আমাদের নিম্নতম সম্মান টুকু দেন না। আমাদের বীর নিবাসের ঘর প্রতি ২০ টাকা দাবি করেন। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।
তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোসলেম আলী হাওলাদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা তালতলীর ইউএনও’র কাছে অসম্মানের পাত্রে পরিণত হয়েছে। ইউএনও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি, ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করেন।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবনে সাজ-সজ্জা না করেই ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউএনও। এছাড়াও আমাদের বীর নিবাসের তালিকার জন্য অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এমন আচরণের সুরহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ইউএনওর সকল কার্যক্রম বয়কট করেছি। এবিষয়ে আমি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন ইউএনও। বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। উপজেলা প্রশাসনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।
তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন। তিনি বলেন, ডিপিপিতে তালতলী উপজেলায় বীর নিবাস বরাদ্দ নেই। তাই তালিকা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ১০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা দিতে তারা আমার কাছে আবেদন করেছেন। আমি তাদের ভাতার বিষয়টি রাজি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, আমি এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।