নানা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন চ্যানেল জয়যাত্রা টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর আগে উনার (হেলেনা জাহাঙ্গীর) লোকজন আমাকে জয়যাত্রা টেলিভিশনের উপদেষ্টা করার জন্য আবেদন নিয়ে আসেন। তখন আমি বলি যে, পরে দেখা যাবে। বর্তমানে জয়যাত্রা টিভির সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সম্প্রতি ‘চাকরিজীবী লীগ’ বিতর্কে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের পদ হারানোর পর দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গণমাধ্যমে জানান।
চুমকি জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাকে তিনি আওয়ামী পরিবারের হিসেবেই চেনেন। জয়যাত্রা নামে তার একটি মিডিয়া আছে, যেটির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীও রয়েছেন। মন্ত্রীর সঙ্গে ভালো জানাশোনা থাকার কারণেই হেলেনাকে উপকমিটিতে রাখা হয়েছিল।
জানাশোনা বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এমনি তার সঙ্গে পরিচয় আছে, জানাশোনা আছে। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী। অনেকের সঙ্গে পরিচয় থাকে না? কিন্তু কেউ যদি কিছু করে, সেটি তার নিজের দায়িত্ব।
মন্ত্রী আরও বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। আমরা কি বলেছি, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?
বৃহস্পতিবার রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে জয়যাত্রা টেলিভিশন কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। সেখানে চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া টিভি চ্যানেল পরিচালনার কারণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অভিযান শেষে র্যাব সদরদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর তার জয়যাত্রা টেলিভিশনের জন্য সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলেন। প্রবাসী প্রতিনিধি নিয়োগের নামে তিনি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও এখানে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অফিস পেয়েছি। এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
অভিযানের পরদিন শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদফতরে হেলেনা জাহাঙ্গীর ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশন সিলগালা এবং সেখান থেকে অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, টেলিভিশনের কর্মী ও সাংবাদিক নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এ ধরনের একটি চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ফোনালাপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া অভিযানে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত নথিপত্রও জব্দ করা হয়েছে।
জয়যাত্রা টেলিভিশন নিয়ে আলোচনায় থাকা এসব অভিযোগের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইপি টিভির বিষয়ে অভিযোগগুলো আমরা খতিয়ে দেখব, সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের পোস্টার ভাইরাল হলে আলোচনায় উঠে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোস্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়। এরপরই আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ হারান হেলেনা।
আটকের পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শুক্রবার গুলশান থানায় দুটি মামলা দায়ের করে র্যাব। দুটি মামলার একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা হয়েছে। অন্যটি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের চারটি ধারায়।
দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে হাজির করা হয়। সেখানে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানির সময় বিচারক হেলেনা জাহাঙ্গীরের কোনো কিছু বলার আছে কি না জানতে চান। তখন হেলেনা বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করি, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে আমি প্রোটেস্ট করি। আমি এখনো পদে বহাল রয়েছি। আমি ফেসবুকে কোনো ধরনের বাজে মন্তব্য করিনি। কেউ কিছু বলতে পারবে না। আমি সরকারি লোক।