মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে দেশটির সশস্ত্র কারেন গেরিলারা। বুধবার সকালের দিকে দেশটির পূর্বাঞ্চলের থাই সীমান্তের কাছে এ হামলা হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
এই হামলার মধ্যদিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জান্তা সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া গণআন্দোলনের সঙ্গে এবার দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো একাত্মতা প্রকাশ করছে। তবে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের ফলে দেশটিতে গভীর সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মিয়ানমারের স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম।
বুধবারের এই হামলার আগে গত শনিবার কারেন বিদ্রোহীরা দেশটির পূর্বাঞ্চলে থাই সীমান্তের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি তল্লাশি চৌকি হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এতে সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্মকর্তাসহ ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ওই এলাকায় কারেন বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা পরিচালনা করে। হামলার মুখে কারেন জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে থাই সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেন।
সেনাবাহিনীর বিমান হামলার পর কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সশস্ত্র শাখা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ‘স্থল সৈন্যরা সব দিক থেকে’ আমাদের ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া দেখানো হতে পারে। দেশটির জাতিগত কারেন সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলের এই সংঘাত আঞ্চলিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার কারেন প্রতিবেশি থাইল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার থাই কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র ২০০ জন এখন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে এবং অন্যরা সীমান্ত এলাকায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা গণতন্ত্রকামীরা দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোট করতে চাইছে।
জান্তার ওপর চাপ তৈরি করতে ইতোমধ্যে বিদ্রোহীদের সহায়তা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। সরকারি সশস্ত্র বাহিনীকে মোকাবিলায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিয়ে ফেডারেল আর্মি গঠনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না তা এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
যদিও দেশটির প্রধান আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেমন— কাচিন, কারেন, রাখাইনের আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের নিন্দা এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ডে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের রক্ষা করবে বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের এক ডজনেরও বেশি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে।
কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট অর্গানাইজেশনের সশস্ত্র শাখা দ্য কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি বুধবার ভোরের দিকে কাচিন রাজ্যের শুয়েগু শহরে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং হামলাকারীরা পুলিশ স্টেশন থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থাবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে কাচিন রাজ্যের সীমান্তে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে কাচিন বিদ্রোহীরা।
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) বলছে, মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৫২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪১ জনই মারা গেছেন গত শনিবার; যা মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।