মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যে প্রস্তাব পাস করেছে, সেখানে ভোট দানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা সামরিক জান্তাকে নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ শুক্রবার ওই প্রস্তাব গ্রহণ করে। খবর বিবিসির। ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১১৯টি, বিপক্ষে একটি। ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ, রাশিয়া, চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান, লাওস, থাইল্যান্ডসহ ৩৬ দেশ।
আইনগতভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাব মানা বাধ্যতামূলক না হলেও রাজনৈতিকভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তার বক্তব্যে ব্যাখ্যা করেছেন কেন বাংলাদেশে এ প্রস্তাবে কোনো ভোট দেয়নি। বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বলা হয়েছে— ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো উল্লেখ না থাকায় বাংলাদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তা বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে দ্রুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় নিরাপদে এবং স্থায়ীভাবে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির কোনো প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়নি। সেখানে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তেমনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো সুপারিশ বা পদক্ষেপ নেই।
প্রতিবেশী দেশ এবং মিয়ানমারের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এসব মৌলিক গুরুত্বের বিষয়গুলো এ প্রস্তাবে না আসায় বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থেকেছে। বাংলাদেশ বলেছে, গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে মিয়ানমারে সংবিধান পুনর্বহালের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার বিষয়ে যে কোনো প্রস্তাব অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি সেটায় রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ উল্লেখ করা না হয়।
২০১৭ সালের সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়টি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারকে যেমন একপ্রকার দায়মুক্তি দিচ্ছে, তেমনি দেশটির অন্য সংখ্যালঘুরাও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ বলেছে, যদিও অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সহায়তা কোনো সমাধান নয়। এ জন্য রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন এবং সেটি অবশ্যই মিয়ানমারে হতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠাতে যেসব শর্ত পূরণ হওয়া দরকার, তার কোনো অগ্রগতি নেই।
আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর একটি কোর গ্রুপ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করেছে, যেখানে মিয়ানমারের সামরিক নেতারাও অংশ নিয়েছিলেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ওই সম্মেলনে যে পাঁচ দফা কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেটিই এসেছে জাতিসংঘের এ প্রস্তাবে। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় মিয়ানমারের অভ্যুত্থানে রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘুদের প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এখন পর্যন্ত সেটি আসেনি, যা একটি ভুল বার্তা দিতে পারে বলে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।