বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে বিদেশে পাঠানো অত্যন্ত জরুরি। সংবিধানের ৪০১ ধারায় সেই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নানা অজুহাতে খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে তারা মিথ্যাচার করছে। খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারকে দায় নিতে হবে। চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মানিকগঞ্জের জনসভায় মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি : মানিকগঞ্জের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ ও ১৯৯০ সালের মতো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অবৈধ সরকার জনগণ দেখে ভয় পায়। সরকারি বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করে দিয়েছে। তাদের আজও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণবিহীন এই সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলার জনগণকে বোকা ভাববেন না। ২০১৮ সালে নির্বাচনে আগের রাতে ভোট দখল করে নিয়ে গেছে। পরদিন জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তখনও একটি সংলাপ করেছিল। এখন আবার সংলাপের জন্য ডাকাডাকি করছেন রাষ্ট্রপতি। এই সংলাপ অর্থহীন। নির্বাচন কমিশনের সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে সরকারের। নির্বাচনকালীন সরকারটা কে থাকবে। সেটা কি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, না হাসিনার সরকার থাকবে। যদি হাসিনার সরকার থাকে তাহলে ভোট নিরপেক্ষ হবে না।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, সরকার দেশের সব সুন্দর জিনিস ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। গুম, খুন, হত্যা, অপহরণ-এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষায় খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসায় দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু এসব দাবি সরকারের কানে যায় না।
মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ কবীর জিন্নাহ, সিনিয়র যুগ্মসধারণ সম্পাদক সত্যেন কান্ত পণ্ডিত ভজন, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরতাজ আলম বাহার, পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন জাদু, যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিনুর রহমান তুহিন, শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লিটন, কৃষক দলের আহ্বায়ক মনি, সাবেক সহসভাপতি জিয়া উদ্দিন কবির, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিন্নহ খান, মহিলা দলের সভাপতি সাবিহা হাবিব, সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার মুন্নি প্রমুখ।
পটুয়াখালী বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগেই ক্ষমতাসীনদের হামলা : পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সভাস্থলের মঞ্চ এবং চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের শহিদ আলাউদ্দিন শিশু পার্ক মাঠে সভাস্থলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। এতে ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়। সমাবেশে হামলার শিকার শ্রমিক দল নেতা আনিচুর রহমান বলেন, ১১টার দিকে স্লোগান দিয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আতর্কিত সভাস্থলে প্রবেশ করে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এতে কমপক্ষে আমাদের ২৫ জন আহত হন। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে জড়ো হলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পরে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর বলেন, বিএনপির বিবদমান দুটি গ্রুপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাদের নানা কর্মসূচিতে বিদ্ধমান। ইতঃপূর্বে নিজেরা একাধিকার হামলা-ভাঙচুর করে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, যা আদৌ সত্য নয়।
এদিকে হামলার পর ফের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পটুয়াখালী জেলা শহরের শহিদ আলাউদ্দিন শিশু পার্কে আয়োজিত সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে এতে সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেন, পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মোস্তাক আহম্মেদ পিনু প্রমুখ।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এর প্রমাণ বিএনপির এই জনসমুদ্রের সমাবেশ। শীঘ্রই সরকারকে পথে নামাতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। আজ যারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নাটক ও নির্যাতন করছে, তারা পালানোর রাস্তাও খুঁজে পাবে না। দেশের জনগণই কঠোর হস্তে তাদের শাস্তি দেবে।
সরকার পুলিশ-র্যাব দিয়ে আমাদের সন্তানদের হত্যা করছে-লালমনিরহাটে টুকু: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সরকার আজ একদলীয় শাসন কায়েম করে পুলিশ-র্যাব দিয়ে আমাদের সন্তানদের হত্যা করছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে লালমনিরহাট জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে এ কথা বলেন তিনি।
শহরের আলোরুপা মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, জেলা বিএনপির নেতা হাফিজুল ইসলাম বাবলা, একেএম মমিনুল হক, ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান প্রমুখ।
সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছে-সুনামগঞ্জে নোমান : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, সরকার আইন-আদালতের কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পান। তিনি জানেন খালেদা জিয়া মুক্ত হলে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে জাতির নেতৃত্ব তার হাতে চলে যাবে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় তার সঙ্গে পারবেন না বলে অন্যায়ভাবে তাকে বন্দি করে রেখেছেন। কাজেই খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, জাতির স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার বিকালে সুনামগঞ্জে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। শহরের পুরাতন বাসস্টেশনে জেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলের সঞ্চলনায় সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি নজির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। স্থানীয়দের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মল্লিক মুইনুদ্দিন সুহেল, দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, জেলা আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. আনিসুল হক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি-মুন্সীগঞ্জে রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। তার মুক্তির মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে আগামী দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক বন্ধ করে কঠিন করা হবে আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন হবে। মঙ্গলবার বিকালে মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম সচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সফু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপি আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, স্থানীয় বিএনপি নেতা আবদুল কুদ্দুস ধীরন, আলী আজগর মল্লিক রিপন প্রমুখ।