হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার বছরের ঐক্য এবং ঐতিহ্যকে বিলীন করে হিন্দুদের ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। আর তার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন মাহফুজ আনাম। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘হিন্দু পারিবারিক আইন সংশোধন প্রতিরোধ আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, অবিলম্বে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তাদের খু&জে বের করে শাস্তি দিতে হবে। হিন্দু সম্প্রদারের লোকজন এই আইনের কোনো রকম পরিবর্তন চায় না। কিছু ধর্মত্যাগী আইন পরিবর্তনের পক্ষে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। তারা না ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। এনজিও ওয়ালাদের ষড়যন্ত্রে ফাঁদে সরকারকে পা না দেওয়ার অনুরোধ করছি।
পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর সরকার বলেন, হিন্দু আইন সংস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন হলো, এই কমিটি হিন্দুদের সংগঠন নয়, এগুলো এনজিওদের চক্রান্ত। অতীতে তাদের কোনো কর্মকান্ড আমরা দেখিনি। হিন্দুরা যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে এদেরকে সামনে রেখে এনজিওগুলো খেলতে চাইছে। আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোত হচ্ছে মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী শাহীন আনাম। তারা অনেকদিন ধরেই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। শাহীন আনাম তার এনজিও মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিওকে টাকা দিয়ে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ তৈরির কাজ করছে। তাদের এই স্বপ্ন পুরণ হতে দেবে না হিন্দুরা। হিন্দু সম্প্রদারের লোকজন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কিছু ধর্মত্যাগী লোকজন এনজিওগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধেছে, তাতে কোনো লাভ হবে না। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামনে নির্বাচনের আগে পরিস্থতি ঘোলা করা। ওরা জানে হিন্দুরা ঐতিহ্যগতভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছে, আইন সংস্কারের মাধ্যমে হিন্দুদের কাছে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে ভোটব্যাংকে ফাটল ধরানো। আমরা আশা করবো সরকার সেই পাতানো ফাঁদে পা দেবে না।
তিনি বলেন, আমরা মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনামকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তারা সেই সুযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এখন আর ছাড় দেওয়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সরকারকে অনুরোধ করবো এসব চক্রান্তকারী এনজিওদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য।
পুজা উদযাপন পরিষদের সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট বিনয় কুমার ঘোষ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় সরকারের সঙ্গে রয়েছে। একটি চক্র এনজিওকে সামনে রেখে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তারা যেভাবে এক-এগারোর সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। পত্রিকায় মিথ্যা নিউজ প্রকাশ করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেন। এক-এগারোর সেই চক্রের শীর্ষে ছিলেন মাহফুজ আনাম। তিনি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, চক্রান্ত থেমে নেই, নিজের স্ত্রীর মালিকানাধীন এনজিওকে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সব কিছুর কলকাঠি নাড়ছেন তিনি।
মহানগর পুজা উদযপান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন হিন্দুদের মধ্যে সংঘাত তৈরির চেষ্টা করছেন। এই এনজিওটির সঙ্গে আরও কিছু এনজিও যুক্ত হয়েছে। এনজিওদের কোনো মতেই ছাড় দেওয়া হবে না। সারাদেশে জনগত গঠন করা হবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বক্তারা বলেন, দুইটি এনজিও এবং কিছু কুচক্রী মহল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃস্টি করতে এসব অপচেষ্টা চালাচ্ছে । অবিলম্বে এসব এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যে আইন হিন্দু সম্প্রদায় চায়না সেই আইন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে একটি মহল। আমাদের এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। খুব দ্রুত সারাদেশব্যপী গনসাক্ষর কর্মসূচি পালন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মহানগর পুজা উদযপান পরিষদের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুশান্ত বসুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট লাকী বাছার, অ্যাডভোকেট প্রতিভা বাকচী, অ্যাডভোকেট শঙ্কর দাস প্রমুখ।