তিন দিনের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে হবে। তাই সবাই ব্যস্ত দোকানের মালামাল নিয়ে। কাগজের কার্টুনে ভরে ছোট ছোট পিকআপ ও ভ্যানগাড়িতে করে এসব মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন সবাই। কথা বলার মতো সময়টুকু নেই তাদের হাতে। নিজেদের রুটিরুজির সম্বল সরিয়ে নিতে রাতের আঁধারেও ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন অনেকেই।
শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে গুলশান শপিং সেন্টারে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও তার আগেই মার্কেটটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। আর তিন দিনের মধ্যে মালামালগুলো সরিয়ে না নেওয়া হলে এর দায়-দায়িত্বও কেউ নেবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যবসার সম্বলটুকু সরিয়ে নিতে মরিয়ে ব্যবসায়ীরা।
কামাল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এই মার্কেটে দীর্ঘ দিন থেকে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে সিটি করপোরেশন আমাদের মার্কেট সিলগালা করে দিয়েছে। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি।
মিজান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে এসে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের একটু সময়ও দেওয়া হয়নি। তবে আমরা তাদের কাছে মালামাল সরানোর জন্য সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বলছে, তিন দিনের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে। না হয় ওই মালামালের দায় তারা নেবেন না। তাই দোকানের মালামালগুলো সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
মোস্তাফিজ নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মালামালগুলো কোথায় নিয়ে যাব; সেই বিষয়টিও আমার মাথা আসছে না। এক পর্যায়ে বাসা নেওয়া চিন্তা করি। এখন বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া কোথায় দোকান নেব সেটা নিয়েও চিন্তায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরকে মার্কেট ছেড়ে চলে যেতে হবে সেই ধরনের কিছু বলা হয়নি। তবে গত ১০ জুন সিটি করপোরেশন থেকে লোকজন আসে। উনারা দোকান মালিক সমিতির সাথে একটি সমঝোতা করেন। সেটা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে মার্কেট খালি করতে হবে। তবে এটা শুধু কমিটি জানে। পরবর্তীতে আমাদের লিখিতভাবে কিছুই জানানো হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার যে সিলগালা করা হয়েছে; সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। হঠাৎ করে এসে তারা সিলগালা করে দেয়। কাউকে কিছু বলেনি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে এই ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আমরা এখানে ব্যবসা করি। আমাদের সকল ধরনের রুটি-রুজি এই জায়গায়। এখন ঢাকা সিটিতে বাসা চাইতে গেলেও দুই তিন মাস সময় লাগে। আর আমাদের দোকান পাওয়া তো অনেক কষ্টের বিষয়। এই পরিস্থিতিতে আমরা খুবই হতাশ। এছাড়া আগামী দিনগুলো অন্ধকার হয়ে গেছে।
দি সোনারগাঁও এন্টারপ্রাইজের এক কর্মচারী বলেন, তিন দিনের মধ্যে মালামালগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তাই মালগুলো সরিয়ে নিচ্ছি।
এই মালগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকের বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রোববার (১৬ জুন) রাত ১০টার মধ্যে মালামালগুলো সরিয়ে নিতে হবে। মালামাল সরিয়ে না নেওয়া হলে পরবর্তীতে সেই মালামালগুলোও বের করা যাবে না। তাই আমরা বিপাকে পড়েছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, মালামালগুলো বের করার জন্য যদিও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হতো তা হলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আমরাও কোথাও একটা দোকান দেখে সুন্দরভাবে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা কোথাও দোকান পাচ্ছি না। কোথাও বাসা ভাড়াও পাচ্ছি না। এখন আমরা যাযাবরের মতো হয়ে গেছি।
তবে উত্তর সিটি করপোশেন কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের ঈদের পর পর্যন্ত সময় দেওয়া ছিল। কিন্তু তারা সরে না যাওয়া নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন পদক্ষেপ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলেই গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। মার্কেট খালি করতে ব্যবসায়ীদের বার বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সবশেষ তাদের ঈদের পর পর্যন্ত সময় দেওয়া ছিল। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য সত্য নয়।
জানা গেছে, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় ২০২১ সালে গুলশান শপিং সেন্টারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে বলে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু সেটি এর কিছুই করেননি ভবন মালিক। ব্যবসায়ীরা ভবনটির নিরাপত্তা নিশ্চিতের কোনো উদ্যোগ নেননি। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার মার্কেটটি সিলগালা করে দেয় সিটি করপোরেশন। প্রতিবাদে গুলশান সড়ক অবরোধ করে ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছিল।