সামরিক খাতে মার্কিন অনুদান অব্যাহত রাখার উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাবিত নতুন চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্র বলছে, ওই চুক্তির শর্তাদি নিয়ে কাল মধ্যাহ্নে চূড়ান্ত পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় ওই বৈঠক আহ্বান করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার উপযুক্ত প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনেও বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অনুদান অব্যাহত থাকবে। কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যৎ অনুদান নিশ্চিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাব করেছে। এটি কান্ট্রি-স্প্যাসিফিক বা এককভাবে বাংলাদেশের জন্যই, এমন কোনো চুক্তি নয়।
তাছাড়া, ওই চুক্তির যেসব শর্তাবলী রয়েছে তা বাংলাদেশের মৌলিক অবস্থানের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে না। কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশে সামরিক অনুদান প্রদান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের লিহেই আইনে সংশোধনী এনেছে বাইডেন প্রশাসন। সংযোজিত ধারায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে অনুদান দিতে পারবে না মার্কিন সরকার। এক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে এমন কোনো সংস্থা বা বাহিনীও মার্কিন অনুদান পাবে না। বাইডেন প্রশাসনের বৈশ্বিক অনুদান বিষয়ক ওই অবস্থান বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ কোন্ খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান ব্যবহার করবে অর্থাৎ কোন্ বাহিনীকে কীভাবে বরাদ্দ দিবে তা তাদের আগাম জানাতে হবে। ওয়াশিংটন এ সংক্রান্ত যে চুক্তির প্রস্তাব করেছে তাতে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোই থাকছে।
বাংলাদেশ ওই চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, আইনের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী মার্কিন অনুদান অব্যাহতভাবে পেতে হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও চুক্তি সই করতে হবে। বাংলাদেশ এই চুক্তি করবে কিনা, সে বিষয়ে ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। বাংলাদেশ কোথায়, কীভাবে ওই অনুদান ব্যবহার করছে, সেটাও যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে। আমরা একচেইঞ্জ নোটের মাধ্যমে ওয়াশিংটন নির্ধারিত সময়সীমা ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি সইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানাবো। প্রস্তাবিত চুক্তিটির বিষয়ে কাল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা দাবি করেন অতীতে বাংলাদেশ সামরিক খাতে যে অনুদান পেয়েছে তা কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার তথ্য ওয়াশিংটনকে জানাতে হবে না। তবে ভবিষ্যতে মার্কিন অনুদান কোন্ বাহিনী পাবে বা কীভাবে ব্যয় হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত পরিকল্পনা জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূলত এটাই ওয়াশিংটন প্রস্তাবিত চুক্তির মূল শর্ত। অতীতে শর্তহীনভাবে বাংলাদেশকে বিরাট অঙ্কের সামরিক অনুদান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি ছিল না। বন্ধু রাষ্ট্রের ওই অনুদান দেশের বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়েছে। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় আগামীতে বৈদেশিক সহায়তার আওতায় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য মার্কিন অনুদান পেতে এখনই চুক্তি সই করতে হচ্ছে। তবে ওই চুক্তির প্রস্তাব গত ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র?্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির অন্তত ৯ দিন আগে এসেছে জানিয়ে সেগুনবাগিচার এক প্রতিনিধি বলেন, মার্কিন ওই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সামরিক অনুদান পেতে চুক্তির শর্তজুড়ে দেয়ার সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। কারণ অনুদান সংক্রান্ত প্রস্তাবটি আগে এসেছে। অর্থাৎ ১লা ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত নোট ভারবাল বা কূটনৈতিক পত্র পেয়েছে ঢাকা। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে পরে। তবে কাকতালীয়ভাবে ৯ দিনের ব্যবধানে আসা দু’টি ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে। ওই সহায়তার উল্লেখযোগ্য অংশ বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে দুটি হ্যামিলটন কাটার নৌজাহাজ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তার জন্য ৫০টি মাল্টি রোল আর্মাড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ারও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে দেশটি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলারের চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান পেয়েছে বাংলাদেশ। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ড্রোন দেয়ার কথাও জানিয়েছে। তবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে দেয়া এক ঘোষণায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট র্যাব এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে প্রদেয় অনুদান বন্ধ করে দেয়।