নোয়াখালীতে স্বামী আবু সোলাইমান মাহমুদ মুহুরী (৩৫) হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্ত্রী রহিমা আক্তার ধনিকে ২৬ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১ এর সদস্যরা। মাইজদী উপজেলা পরিষদের সামনে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ স্বামী অপহরণ হয়েছে বলে সুধারাম মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন স্ত্রী রহিমা আক্তার। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান তদন্ত করতে গিয়ে মৃত্যুর এক বছর পর ১৯৯৮ সালে ২৮ মে অজ্ঞাত মরদেহ পান। মরদেহটি সোলেমান মুহুরীর বলে বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে জানেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সোলেমান মুহুরীর স্ত্রীসহ ৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত ৩ আসামি সোলেমান মুহুরীকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার নোয়াখালী বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এএনএম মোর্শেদ খান রহিমা আক্তার ধনিসহ ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। একইসঙ্গে স্ত্রী ধনিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপর দুই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বেগমগঞ্জ উপজেলার রায়কৃষ্ণপুর গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে হেঞ্জু মিয়া (৫০) ও সুধারাম থানার আনোয়ার উল্লাহর ছেলে গৃহশিক্ষক সামছুদ্দিন (৪০)।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. এমদাদ হোসেন কৈশোর ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ত্রী রহিমা খাতুন, হেঞ্জু মিয়া ও গৃহশিক্ষক সামছুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে তারা ১৬৪ ধারায় নিজের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর জামিনে বের হওয়ার পর তারা পলাতক হন। ১৯৯৭ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি সোলেমান মুহুরীকে সুধারাম মডেল থানার চন্দ্রপুর এলাকার নীলকুঠি নামক বাড়িতে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখেন। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ মামলার রায় দেন।
মো. এমদাদ হোসেন কৈশোর আরও বলেন, মামলার বাদী থেকে মামলার আসামি হয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন স্ত্রী রহিমা খাতুন। মূলত স্ত্রী রহিমা হেঞ্জু মিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত হয়ে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হন। রায়ে বলা হয় গৃহশিক্ষক সামছুদ্দিন টাকার লোভে পড়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত হয়।
র্যাব-১১ এর সিপিসি-৩ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলার ১০ বছর পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপন চলে যায় স্ত্রী রহিমা খাতুন। আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করি। গতকাল দুপুরে সুধারাম মডেল থানার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে সন্ধ্যায় আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।