নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমরা জানি মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না। কিন্তু ওরা (আওয়ামী লীগ) সন্ধ্যার পরে নাটকের মতো সেন্টার তৈরি করে বলবে আমরা জিতেছি।’
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এ কথা বলেন। শ্রমিক হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, কর্মচ্যুতদের পুনর্বহাল, গ্রেপ্তারদের মুক্তি, গার্মেন্টস শিল্প ঘোষিত মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এসময় মান্না বলেন, ‘চারদিক থাকে শোনা যাচ্ছে গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে ও বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে। কিন্তু সে কথা তারা (সরকার) ভাবছে না। তারা বলছে সব কিছু আমরা দেখব, পরে কী হয়। আমি আপনাদের (শ্রমিকদের) অনুরোধ করব যে, আপনারা আপনাদের ন্যায্য সংগ্রামের সঙ্গে ভোটাধিকারের যে সংগ্রাম চলছে সে লড়াই অব্যাহত রাখুন। শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতব।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর একজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, এর জন্য আমরা দুঃখিত। পুলিশরা আমাদের ওপর লাঠির বাড়িও দেয়। জানি, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের চাকরি রক্ষার জন্য এগুলো করতে হয়। কিন্তু একই দিনে এবং তার আগে এই দেশে শ্রমিকরা আন্দোলন করতে গিয়ে চারজন মারা গেল। ওই চারজনের কথা কেউ বলে না। সরকার টিভিতে লাগাতারভাবে একটা (২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ) ঘটনা বলে। কিন্তু যে শ্রমিক যারা ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করেছে তাদের কথা তারা বলছে না। বরং বলছে আন্দোলন যদি করো, শেষ পর্যন্ত আমও যাবে ছালাও যাবে। তারা হুমকি দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে চায়।’
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘যেসব আমলা দুইদিন আগে চাকরি ছেড়েছে, আজকে তাদের তারা নমিনেশন নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও তার অফিসে বসে তার দলের লোকজনদের নমিনেশনের পেপারে সিগনেচার করছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস কী রাজনৈতিক অফিস?’
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার জন্য প্রত্যেকটি লড়াইয়ে শ্রমিকরা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ফলাফল হয়েছে শূন্য। শ্রমিকদের জীবনমান রক্ষা এবং তাদের ন্যায্য মজুরির জন্য যে বিধি-বিধান ও আইনি কাঠামো তৈরি করার দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। আর আজ একটা ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের ভোট ছাড়া দুইবার ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা ক্ষমতা চতুর্থ দফা নবায়নের জন্য একটা নীল নকশার নির্বাচনের পথে হাঁটছে।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘বাংলাদেশে যত আন্দোলন হয় সে আন্দোলনগুলো যত ন্যায্যই হোক, আপনারা দেখবেন যারা সেসব আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা কোনো ধরনের বিচার পায় না। আজকে বাংলাদেশের আইন-কানুন এ রকম যে, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট তারাই করে যারা সেদিন গুলি চালিয়েছিল। কারা চার্জশিট দেবেন? কারা রিপোর্ট দেবে? কারা বিচার করবে? এরাই শ্রমিকদের হত্যা করে এবং এরাই সাধারণ মানুষদের হত্যা করে। আবার তারাই এ বিচারগুলো করে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক এ এ এম ফয়েজ হোসেন, নির্বাহী সমন্বয়ক আব্দুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলু।