তিন রোগীর শরীরে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন পুশ করার অভিযোগ উঠেছে নার্সদের বিরুদ্ধে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন পুশ করার পর থেকে ওই রোগীরা খিঁচুনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। রোববার (২৭ মার্চ) রাতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোববার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন ফয়সাল (২৮) ও সামছুদ্দিন (৩০)। কানে ব্যথা নিয়ে সন্ধ্যায় ভর্তি হন লালজান বেগম (৩৮)। হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সরা ফয়সাল ও সামছুদ্দিনের শরীরে ৫০০ মিলি করে দুইটি এবং ১০০০ মিলি করে মোট চারটি স্যালাইন পুশ করেন। কিছুক্ষণ পর থেকেই বমি ও শরীরে ঝিমুনীসহ খিঁচুনি দেখা দেয়।
এ সময় ফয়সাল স্যালাইনের প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখেন একটি প্যাকেটে ২০১৮ সাল এবং আরেকটি প্যাকেটে ২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। এ সময় পাশের বেডের আরেক রোগীর প্যাকেটেও একই অবস্থা দেখতে পান। বিষয়টি দায়িত্বরত নার্সকে (সেবিকা) ডেকে দেখালে তারা রোগীদের কথা না শুনে উল্টো চুপ থাকার জন্য হুমকি ধামকি দেন।
এরপর নারী ওয়ার্ডে লালজান বেগমের শরীরেও মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন পুশ করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার সময় পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে আয়েশা সিদ্দিকী জয়ী, সানা আক্তার, মিনারা খানম ও রুনা আক্তার নামে চার নার্সের শিফট ডিউটি ছিল। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা. আলিফ উল আরিফ।
অসুস্থ লালজান বেগমের বোন জামাই উত্তম আলী জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালুইন পুশ করার বিষয়টি ধরা পড়ার পরও চিকিৎসক ও নার্সরা অনুতপ্ত হয়নি। উল্টো তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। খবর পেয়ে উথলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলী হাসপাতালে এলে তার সঙ্গেও নার্সরা খারাপ ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে, জুনিয়র নার্সকে ইনচার্জ করায় নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। এর জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
নার্স ইনচার্জ ইসরাত জাহান শিরীন জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন কিভাবে এলো তা তিনি জানেন না। তার আগের ইনচার্জ স্টোরকিপারের কাছ থেকে এসব স্যালাইন বুঝে নিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইনচার্জ দিলশাত খানম জানান, আমি হয়তো ভুলে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন স্টোর থেকে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ যারা স্যালাইন পুশ করলো তাদের ভালো করে দেখে নেওয়া উচিত ছিলো। বিষয়টি তাৎক্ষণিক খতিয়ে দেখার জন্য জেলা সিভিল সার্জন রাতেই শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করা মোটেও কাম্য নয়। এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনকারী নার্স ও চিকিৎসক যারা ছিল তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।