রাজধানীর বাড্ডায় এলাকার প্রগতী স্মরণীতে খোলা হয়েছিল বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর আড়ালে চলত এমএলএম ব্যবসা। ওই এলাকার বিভিন্ন জনকে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়োগ দিত। এরপর তাদের বলা হতো সংস্থাটির সদস্য বানালে প্রতি সদস্য বাবদ তাদের দেওয়া হবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু অন্যদিকে যারা এই সংস্থার সদস্য হতেন তাদের বলা হতো ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে তারাও বেতন হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার করে পাবেন।
এছাড়া সদস্যদের বলা হতো কোনো এলাকায় হতদরিদ্র পরিবার তাদের মেয়েকে বাল্যবিবাহ হচ্ছে ও নদীতে বালু তোলার খবর পেলেই তারা যেনো তাদেরকে অবগত করেন। এটাই ছিল সদস্যদের কাজ। এই সহজ কাজটির জন্য অনেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতেন। এভাবে চক্রটির বিভিন্ন জনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। এভাবে মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়নের নামে এমএলএম ব্যবসা ও সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হাতানো ছাড়াও চাঁদাবাজি করে আসছিল চক্রটি। তারা দীর্ঘদিন থেকে এসব অপকর্ম করে আসছিল। কিন্তু রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির মূলহোতাসহ ১১ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. ক. আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
গ্রেফতাররা হলেন- আব্দুল কাদের (৪৪), মির্জা নাসির উদ্দিন (২৫), মাহফুজুর রহমান (৫০), এ আর আব্দুল মোমেন (৪৯), মেহেদী হাসান (২৫), আমজাদ হোসেন (৩৪), মঞ্জুরুল হাসান খান (৩৫), আব্দুল বারিক (৩৮), রুহুল আমিন (২৫), মুন্নি (৩০), নিলুফা ইসলাম নিপা (৩৪)। এসময় একজনকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারসহ চারটি কম্পিউটার, চারটি ল্যাপটপ, ১৭টি মোবাইল, নগদ ৯৭ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, চুক্তিনামা,প্যাড, সীল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।
লে. ক. আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, চক্রটি ঢাকার বাড্ডার মধ্য বাড্ডা এলাকার ১৮৭ নম্বর বাসার ছয় তলায় ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’ এর নামে একটি অফিস খুলেছিল। তারা বিভিন্ন জনকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি দিত। তাদের কাজই ছিল সদস্য সংগ্রহ করা। আবার সদস্যদের বলা হতো তাদের কাজ হচ্ছে কোথাও বাল্যবিবাহ হলে ও নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার খবর যেন চক্রটিকে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে প্রতি মাসে তাদেরকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। এ সহজ চাকরি পেতে অনেকে লোভে পড়ে ৩০ হাজার করে টাকাও দিয়েছে। কিন্তু কেউ টাকা পেত না।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার অফিসে যেতেন। কিন্তু তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হত। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এভাবে অভিযুক্ত চক্রটির মূলহোতা আব্দুল কাদের কয়েক হাজার গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।