জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে ‘স্থায়ী মানবাধিকার সংকট’ সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিবেদনটিতে মিয়ানমারে চলমান সব সহিংসতা শিগগির বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পরপরই গ্রেফতার করা হয় ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা নোবেলজয়ী অং সান সু চিকে। সে সময় জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করলেও, দেশটির সিংহভাগ জনগণ তা মেনে নেয়নি।
ক্ষমতা দখলের পর তীব্র বিক্ষোভ, সরকারি কাজকর্ম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এখনো কিছুদিন পরপরই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মিয়ানমারে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (৩ মার্চ) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আইন বহির্ভূত বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ, জনবসতি উচ্ছেদের জন্য গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া ও মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়েছে। ফলে দেশটির উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা বেড়েছে।
জান্তা সরকারের দমন-নীপিড়নের প্রতিবাদ জানাতে দেশটিতে গঠিত হয়েছে বিরোধী সরকার ও প্রতিরোধ বাহিনী। তাছাড়া, জান্তা সরকারের ওপর আবারও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির সেনাবাহিনী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
‘সরকারের অধীন নয় এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে জান্তা সরকার বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে খাবার, তহবিল ও গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে ও গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে রাখতে চাই।’
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, এত কিছুর পরও বার বার পার পেয়ে যাওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধ ও নীতিমালাকে চরম উপেক্ষা করে আসছে। ক্রমেই ঘনীভূত হতে থাকা এ বিপর্যয় রোধে এখনই জরুরি ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকট নিরসনে উপযুক্ত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জান্তা সরকারকে অবশ্যই সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে।
এর আগে জান্তা সরকার মিয়ানমারে তাদের নৃশংতা চালানোর বিষয়টি শক্তভাবে অস্বীকার করেছিল। উল্টো তারা বলেছিল, দেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডহেভার বলেন, দেশটির প্রায় ৭৭ শতাংশ জুড়ে শসস্ত্র সংঘাত চলছে। এর আগে কোনো সংকট গোটা দেশজুড়ে এতটা বিস্তৃত হয়নি।
স্থানীয় মনিটরিং গ্রুপগুলো বলছে, মিয়ানমারে সেনা অভুত্থানের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে। অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করারও অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন দেশটির সেনাদের নির্যাতনে। শুধু তাই নয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি।