কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ মানবতার ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে বলে মনে করেন বেশিরভাগ আমেরিকান। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইপসোসের প্রকাশিত এক মতামত জরিপে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আমেরিকান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আর ৬১ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের বিশ্বাস, দ্রুত বিকাশমান এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব সভ্যতাকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি চ্যাটবট সর্বকালের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপ্লিকেশন হয়ে উঠেছে। যে কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক একীকরণ নতুন এই প্রযুক্তিকে জনসাধারণের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো টেক ও সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান এখন পরস্পরের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে। অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
আইনপ্রণেতা এবং এআই কোম্পানিগুলোও নতুুন উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এআই নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ ও এর সম্ভাবনা-শঙ্কার বিষয়ে মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে অংশ নিয়েছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান। এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন সিনেটর কোরি বুকার বলেছেন, ‘এই দৈত্যকে বোতলে রাখার কোনো উপায় নেই। বিশ্বজুড়ে এর বিস্ফোরণ ঘটছে।’ এআইকে কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের আলোচনায় সিনেটের কোরি এমন মন্তব্য করেছেন।
রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ। আর এই বিষয়ে নিশ্চিত নন ১৭ শতাংশ মানুষ।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেশি দেখা গেছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, মানবতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করেন ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া ৭০ শতাংশ ভোটার। অন্যদিকে জো বাইডেনকে ভোট দেওয়া ভোটারদের ক্ষেত্রে এই হার ৬০ শতাংশ।
ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবতার জন্য হুমকি’ ইস্যুতে ‘দৃঢ়ভাবে একমত’ পোষণ করার হার বেশি। ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের এই হার ৩২ শতাংশ। সেই তুলনায় নন-ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের হার ২৪ শতাংশ। মার্কিন রাজনীতিতে ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানরা প্রায়ই ব্যাপক প্রভাব রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিবিষয়ক সংস্থা ফিউচার অব লাইফ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ল্যান্ডন ক্লেইন বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে আমেরিকানদের ব্যাপক মাত্রার উদ্বেগের কথা বলছে এই জরিপ।
সংস্থাটি মার্কিন ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার সিইও ইলন মাস্ক লেখা এক খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে। চিঠিতে এআইয়ের গবেষণায় ছয় মাসের বিরতির দাবি করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা বর্তমান মুহূর্তটিকে পারমাণবিক যুগের শুরুর মতোই দেখি এবং আমাদের কাছে জনসাধারণের বোঝাপড়ার তথ্য রয়েছে। যা এআইয়ের লাগাম টানতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
রয়টার্স-ইপসোসের এই অনলাইন মতামত জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্ত বয়স্ক ৪ হাজার ৪১৫ জন নাগরিক অংশ নিয়েছেন। গত ৯ থেকে ১৫ মে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।