ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকার নাম নাজনীন নাহার। তিনি আনোয়ারা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ২০২৪ সালের জুন মাসে ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন তিনি। কিছুদিন পর জানতে পারেন, তিনি যমজ সন্তান গর্ভে নিয়েছেন। চিকিৎসকেরা পুরো গর্ভাবস্থায় পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। এরপর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় ছুটির আবেদন করেন নাজনীন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবেদন আমলে না নিয়ে ছুটি অনুমোদন করেননি। এমনকি অফিস আদেশ জারি না হওয়ায় কয়েক মাসের বেতন ও বিলও আটকে যায় নাজনীনের।
নাজনীন নাহার বলেন, আমি সব কাগজপত্রসহ আবেদন করেছি। তারপরও বলা হলো, আমি নাকি কিছু জমা দিইনি। অথচ আমার কাছে স্ক্যান কপি, প্রেসক্রিপশন, আবেদনপত্র-সব প্রমাণ আছে। আমার স্বামী ছুটির বিষয়ে জানতে শিক্ষা অফিসে গেলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে বলেন, বাচ্চা নিতে হবে কেন? এত ছুটি কেনো লাগবে? চাকরি করবে কি না বলেন, ডিপিওতে জানিয়ে দিচ্ছি। এরপর শিক্ষা অফিস থেকে পরে দাবি করা হয়, ছুটির আবেদনপত্র অফিস থেকে হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিও) থেকে লিখিত আদেশ পাওয়ার পরেও এখনো চিকিৎসাজনিত ছুটি অনুমোদিত হয়নি। পরে অনেক দেরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটির আংশিক বেতন কার্যকর করা হয়, তাও তৃতীয় মাসে গিয়ে। বাকি বিল ও ছুটি এখনো ঝুলে আছে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর নাজনীন উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লেমশিয়ার জটিলতায় জরুরি সিজারিয়ান সেকশনে যমজ সন্তানের জন্ম দেন। সন্তানদের শারীরিক জটিলতা থাকায় ২৮ দিন এনআইসিইউতে রাখতে হয়। তিনিও পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তবু ওই সময়ের জন্য নির্ধারিত ছুটি কিংবা বিল কিছুই পাননি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ছুটির বিষয় নিয়ে তিনি সরকারি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রশ্ন তুললে সেখান থেকেও তাকে বের করে দেওয়া হয়। একজন মা হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে আমাকে এত কিছু সহ্য করতে হলো। স্বামীকে অপমান করা হলো। সরকারি চাকরিতে থেকেও ন্যায্য ছুটি ও বেতন পেতে আমাকে বারবার আবেদন করতে হচ্ছে। এটা খুবই লাঞ্ছনাকর। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোনো ব্যবস্থা নেননি । বর্তমানে আমি কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছি।
এবিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুর রহমান ভূইয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। আবার খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছে কাগজপত্রে কিছুটা সমস্যা আছে।