অনেক ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খাবার তৈরিতে হাড় ছাড়া মাংস ব্যবহার করে। সুপারশপগুলো এবং বিভিন্ন বড় বাজারে হাড় ছাড়া ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়। সেই হাড়গুলো কোথায় যায়, সেই প্রশ্ন অনেকের। কেউ কেউ মনে করেন, মাংস আলাদা করার পর হাড় ফেলে দেওয়া হয়।
তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরখানেক আগেও মাংস আলাদা করার পর ব্রয়লার মুরগির হাড় ফেলে দেওয়া হতো। কেউ কেউ এই হাড় মাছ (মাগুর মাছ) ও কুকুর-বিড়ালের খাবার হিসেবে ব্যবহার করতেন। তবে সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। এখন সেই হাড়ই খাচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সুপারশপ মিনা বাজারের অনলাইন প্লাটফর্ম মিনা ক্লিকে গিয়ে দেখা যায়, এক কেজি হাড় ছাড়া ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে।
নগরীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার হাজী জয়নাল আবেদীন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। পাশেই আরেক দোকানে ব্রয়লার মুরগির শুধু হাড় বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে।
দোকানের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই দেখা যায় খদ্দের। এক নারী এসে কিনলেন তিনটি মুরগির হাড়। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মুখ লুকান তিনি।
পরে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। জানান, বছরখানেক আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। কাজ করেন একটি বুটিকস প্রতিষ্ঠানে। একার আয়ে তিনজনের সংসার চালানো বেশ কঠিন।
ওই নারী বলেন, ‘ভাড়া বাসায় থাকি। পোলাপানের পড়ালেখা আছে। তারপর চলতে অনেক কষ্ট হয়। তাই কম দামে যা পাই, তাই কিনি।’
তিনি বলেন, ‘পোলাপান মাংস খাইতে চায়, মাংস ক্যামনে কিনুম? হাড্ডি নিছি, এগুলা লাউ দিয়া রান্না করুম।’
মাংস ছাড়া হাড় বিক্রি করছেন নজরুল ইসলাম। এই দোকানি জানান, ওই নারীর মতো অনেক ক্রেতাই প্রতিদিন এই হাড় কিনতে আসেন।
হাড়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আড়ৎ থেকে আনি। অনেকে কিমা বানায়, হাড্ডি ছাড়া মাংস নেয়, তখন হাড্ডিগুলো থাকে। ওইগুলা আমরা কেজি হিসাবে কিনি। ৮৫ টাকা কেজি। আমরা আবার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করি।’
এই বিক্রেতার ভাষ্য, প্রতিদিনই তার দোকানে কম-বেশি এই হাড় পাওয়া যায়। দরিদ্র মানুষই মূলত এই হাড়ের ক্রেতা।
শুধু হাড় নয়, নজরুল ইসলাম ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন মুরগির পা। যার চাহিদাও বেশ ভালো বলে জানান বিক্রেতা।
এছাড়া মুরগির গলা, গিলা-কলিজা মিলিয়েও বিক্রি করা হয়। কেজি প্রতি দাম নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা।