বিশাল অরণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে সোনা। সেই সোনার ভান্ডার ধরা পড়ল মহাকাশ থেকেও! সম্প্রতি নাসা এই ছবি প্রকাশ করেছে। এই সোনার ভান্ডার রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে। মাদ্রে-দে-দিয়োস নামে সোনার একটি বিশাল খনি রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে।
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে পেরু। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সোনার খনি মাদ্রে-দে-দিয়োসের কারণে আমাজন জঙ্গল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
সোনা নিষ্কাশনের জন্য পারদ ব্যবহার করা হয়। পরিবেশবিদদের দাবি, যথেচ্ছ পারদের ব্যবহারে দূষণ বাড়ছে আমাজনে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সোনার খনিতে কাজ এবং জঙ্গলে সোনা খুঁজেই নিজেদের জীবন নির্বাহ করে সেখানকার হাজারো পরিবার।
পেরুর সোনার খনি সম্পর্কে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সোনার খনি দেখতে কেমন, সেই স্বর্ণভান্ডারের ছবি মহাকাশ থেকে তোলা হয়েছে। এমন আকর্ষণীয় দৃশ্য, গোটা খনির দৃশ্য আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
স্যাটেলাইট থেকে তোলা সেই ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সোনার খনি কত এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। স্বর্ণালি রং ধরা পড়েছে নাসার তোলা ছবিতে। এতটাই বড় এই সোনার খনি যে, সূর্যের আলো পড়লে গোটা এলাকা চকচক করে।
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ থেকে তোলা হয়েছে সেই ছবি। দৃশ্যত এই খনিকে বেশ সুন্দর এবং আকর্ষণীয় মনে হলেও, এই স্বর্ণভান্ডারের কারণেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে আমাজনের মাইলের পর মাইল ঘন অরণ্য। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
১৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই ‘সোনার জঙ্গল’। সোনার খোঁজে এখানকার বাসিন্দারা অবৈধভাবে খনন করে। যার জেরে প্রতিনিয়ত বিপদ বাড়ছে। আমাজনের মধ্যে থাকা এই খনি নদী এবং হ্রদ দিয়ে ঘেরা। যে ছবি নাসা প্রকাশ করেছে তাতে খনির বাঁ দিকে ইনামবারী নদী দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও জঙ্গলের মাঝে জলভর্তি বড় বড় গর্তও দেখা যাচ্ছে। সেগুলোও স্বর্ণালি রঙের। স্থানীয়রা অবৈধ ভাবে সোনা খুঁজতে গিয়ে এই গর্তগুলো বানিয়েছেন।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, সোনার খননে মিথাইলমারকারি নামে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যে রাসায়নিক এখানকার নদী এবং জলাশয়গুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে। যা আমাজনের ‘স্বাস্থ্যের’ পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। ১৯৯০ সালে অবৈধভাবে সোনা খননের জন্য ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের হত্যার অভিযোগ ওঠে সোনা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে সোনা মাফিয়াদের হাতে খুন হয়েছিলেন আরও দু’জন।
নাসা প্রকাশিত ছবির নিচের অংশে রয়েছে নুয়েবা এরেকিয়া। এটি সাদার্ন ইন্টারওশেনিক হাইওয়ের পাশে রয়েছে। ২০১১ সালে এই হাইওয়ে বানানো হয়েছিল। এটিই একমাত্র রাস্তা, যেটি পেরুকে ব্রাজিলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এই হাইওয়ে পর্যটন এবং বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য বানানো হয়েছিল। কিন্তু ক্রমে এই রাস্তাকে অবৈধ খনন এবং আমাজনের গাছ পাচারের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়।
সোনার জঙ্গলের কিছু অংশ টেম্বোপাতা জাতীয় উদ্যানের মধ্যে পড়ে। যদিও ওই জাতীয় উদ্যানের মধ্যে থাকা সোনার ভান্ডার সুরক্ষিত।