“আমি তাকে বাড়িতে এনে স্ত্রীকে বলেছিলাম, ‘আমি তোমার জন্য উপহার এনেছি’,” সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত হাজানোর ৫৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ ওসমান বলছিলেন এ কথা।
তিনি শিশুটির নাম রেখেছেন হিবাতুল্লাহ, যার অর্থ ‘আল্লাহর উপহার’, এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে বড় করবেন।
হিবাতুল্লাহ নামের শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়েছেন তিনি। যাকে ফেলে গেছে তার মা।
সিরিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন মায়েরা শিশুদের মসজিদ, হাসপাতাল এমনকি গাছের তলায় পর্যন্ত ফেলে চলে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ১২ বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে ভেঙে পড়েছে সিরিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ক্ষুধা ও দারিদ্রতায় বিপর্যস্ত মায়েরা এ কারণে বাধ্য হয়ে শিশুদের ফেলে চলে যাচ্ছেন— এই আশায় তাদের সন্তানদের অন্য কেউ হয়ত বড় করে তুলবেন।
আর দারিদ্রতার আঘাতে বিপর্যস্ত সিরিয়ায় শিশুদের ফেলে যাওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান ফর ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস বলেছে, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ বাঁধার আগে সিরিয়ায় সন্তানদের পরিত্যাগ করার ঘটনা হাতে গোনা কয়েকটি ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ২০২১ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের শেষ সময় পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি শিশুকে ফেলে যাওয়ার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬২টি মেয়ে শিশু ছিল। তবে আসল সংখ্যা হয়ত আরও বেশি। এসব শিশুকে দেশটির বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
সিরিয়ান ফর ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস নামের সংস্থাটি জানিয়েছে, দারিদ্রতা ছাড়াও অস্থিতিশীলতা, অনিরাপত্তা, বাল্য বিবাহ, যৌন নিগ্রহ এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও এই সংখ্যা বাড়ার পেছনে দায়ী।
সিরিয়ায় শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ, এ কারণে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন ওসমান।
কুড়িয়ে পাওয়া হিবাতুল্লার প্রতি ইতোমধ্যেই মায়া জন্মে গেছে ওসমানের। তার চাওয়া, যখন তিনি দুনিয়ায় থাকবেন না এবং তার সম্পত্তি ভাগ হবে তখন যেন হিবাতুল্লাহকেও তা দেওয়া হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওসমান বলেছেন, ‘আমি আমার সন্তানদের বলেছি যদি আমি মারা যাই, আমার সম্পত্তির ভাগ যেন তাকেও দেওয়া হয়। যদিও সে কখনো সরকারিভাবে আমার পরিবারের সদস্য হতে পারবে না।’
বর্তমানে হিবাতুল্লাহর বয়স তিন বছর হয়েছে। আর যে ওসমান তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তাকে দাদা বলে ডাকে সে।