মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একইসঙ্গে জনগণের করের টাকায় আমলাদের বেতন হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জনগণকে সেবাদান কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। তাই সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার।
আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরো বেশি জরুরি। এ সময় কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখারও তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি জনগণের সেবক হিসেবে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, আমরা ও আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। তিনি উল্লেখ করেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি কার্যকর মাধ্যম। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং জনগণের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিসিদেরকে কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রকৃত দরিদ্ররা যেন এই কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব গ্রামোন্নয়নের দিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যা বিগত বছরগুলো থেকে আলাদা। শহরের ন্যায় গ্রামগুলোতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মফস্বল এলাকাগুলোতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ডিসিদেরকে আবাসন, শিক্ষা, কৃষি নির্ভর শিল্পের প্রসার, চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে উপজেলা সদর ও বর্ধিষ্ণু শিল্পকেন্দ্রগুলোকে আধুনিক শহর-উপশহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান দেশের উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী করতে জেলা ও উপজেলা সদরে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হওয়ার আদেশ দেন। মাদকের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আব্দুল হামিদ বলেন, মাদকদ্রব্য যাতে দেশের প্রাণশক্তি যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকেও ডিসিদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমার বিশ্বাস, আপনাদের মেধা ও দক্ষতা জনকল্যাণের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে যথাযথ অবদান রাখবে। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশাত্মবোধ ও একাগ্রতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবেন।