(চতুর্থ পর্ব)
আমরা ১১ জন, একটা ছোট্ট কামরায় বন্দী। ঘরের দুই পাশে দুটি জানালা। একটা কাঠের দরজা। সামনের দরজার পাশের জানালায় ব্রেন্চ পাতা। তাতে তিনজন সৈনিক। পাশের জানালা দিয়ে বাইরে দেখা যায়।
সৈনিকরা অসাধারণ সতর্ক, আমাদের মত
” রাষ্ট্রোদ্রহীদের”পাহাড়ায় !
কথায় কথায় খবরদারী, কুৎসিত ইংগিতে জানান দেয়া, তাদের প্রভুত্ব ! আমাদের সামরিক প্রভুদের দয়ায়, এখন বাইরের টয়লেট -এ যেতে পারছি। তবে সামনে পিছনে কড়া শসস্ত্র পাহারা। প্রথমে তো, দড়জা খুলে রেখে, টয়লেট ব্যবহার করার নির্দেশ ছিলো। ওখানে প্রতিবাদ করায়, রীতি বদলান, উনারা !
সেন্ট্রি’রা গালাগালির ফাকে ফাকে, আমাদের অনেক উপদেশ দেন। বাবা মা’য়ের টাকা নষ্ট করে, ঐ ছেলেধরাদের ( রাজনৈতিক নেতা) হাতে পরার জন্য, আফসোস করে। ঐ ছেলে ধরারা দিনে দিনে আমাদেরকে কি ভাবে ছাত্র থেকে একেকটা দুষ্কৃতকারী হিসাবে তৈরি করেছে, তার দীর্ঘ ফিরিস্তি হাজির করে, ভালো হয়ে যেতে বলেন। ধৈর্য ধরে শুনতে শুনতে, দু-একটা কথা আমরাও বলি। কথা বলা শুরু হয়। আমরাও আমাদের কথা বলতে চেষ্টা করি। মনে হয় কিছু কাজ হচ্ছে। ওনারা আমাদের কথা বলার সুজোগ দিচ্ছে।
যথারীতি সকাল বেলা পিটি প্যারেড করে এসে, আমাদের কামরার দড়জা খোলার নির্দেশ দেন, অফিসাররা । আমরা তারাতারি তৈরি হই, স্যার দের দারা নির্যাতিত হওয়ার। সেই ছোট বেলায়
“ওরা ১১ জন” সিনেমা দেখেছিলাম। ওখানে, নির্যাতিতা নারীদের সাথে, আমাদের খুব মিল খুজে পাই। কুকড়িয়ে নিজেদের দেয়ালের সাথে সেটে রাখার সে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা ! কখনো বাম, কখনো ডান পাশ থেকে, লাথি আর সাথে খিস্তি ! কি কুত্সিত ভংগিমা ! দেশীয় বাহিনীর এমন আচরন ! আমরা যন্ত্রনায় কুকিয়ে উঠি, উনারা আনন্দে শীষ দিয়ে উঠেন ! এ যেন সেই আনন্দ, যার জন্য ফজল মিয়া অপেক্ষা করেছিলো ১৮ টি বছর !
সারা শরীর অজস্র যন্ত্রণায় ভরে উঠেছে, মন’টা আরো বেশী বিষিয়ে উঠেছে !
অফিসার চলে গেলে, দরজা বন্ধ হয়। আমরা কাতরাতে কাতরাতে একজন আর একজনকে শান্তনা দিতে থাকি। এরি ফাকে হয়তো কেউ ডুকরে কেদে উঠলাম। সবাই তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে, করতে, এক এক করে সবাই কেদে উঠতাম । হঠাৎ করেই হয়তো কমরেড ওয়াজেদ পারভেজ বা তৌহীদ খান বলে উঠলো, একটা হাসির কথা! ধীরে ধীরে আমরা সবাই আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করলাম। নাস্তা এলো। লুচি আর ডাল। তবে এর পরের চা’টা কিন্তু চমৎকার। টিনের মগ- এ, এক মগ চা ! আহ্…….. তারপর শামসুদ্দিন চৌধুরী মুকুল এর দামী ফিল্টার টিপ সিগারেট আর আমাদের স্টার এ সুখ -টান !
এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা !
বন্ধু সহীদুজ্জামান সেলিম, তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, পারলে একটা নাটক বা সিনেমা বানাতেই পারে। মন্দ হবে না।
কি রে সেলিম, বানাবি নাকি, একটা?
(চলবে)
লেখক :