ইরানের একটি সামরিক স্থপনায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৯ জানুয়ারি) মধ্যরাতে দেশটির ইসফাহান শহরের একটি প্রতিরক্ষা কারখানায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার ভোরে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা আইআরএনএ এই তথ্য সামনে আনে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
তবে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক স্থপনায় ড্রোন হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার দিবাগত গভীর রাতে ইসফাহান শহরের ইরানি প্রতিরক্ষা কারখানায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, হামলা চালাতে আসা তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
অবশ্য কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তা জানায়নি ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের কেন্দ্রীয় শহর ইসফাহানের একটি সামরিক প্ল্যান্টে ‘ব্যর্থ’ ড্রোন হামলার কারণে বিকট বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আইআরএনএ এর প্রকাশিত ইরানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হামলা চালাতে আসা একটি (ড্রোন) … বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পাল্টা আঘাত করা হয়েছে এবং অন্য দু’টি ড্রোন ইরানি প্রতিরক্ষা ফাঁদে পড়ে বিস্ফোরিত হয়েছে। সৌভাগ্যবশত, এই ব্যর্থ আক্রমণে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি এবং ওয়ার্কশপের ছাদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।’
পৃথকভাবে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কাছে একটি শিল্প অঞ্চলের তেল শোধনাগারে আগুন লেগেছে। ওই টিভি আরও জানিয়েছে, তেল শোধনাগারে আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে টিভি ফুটেজে দমকলকর্মীদের আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
এপি বলছে, ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। আর এই ছায়া যুদ্ধের মধ্যে ইরানের সামরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনায় গোপন হামলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত বছর ইরান বলেছিল, রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলে পারচিন সামরিক ও অস্ত্র উন্নয়ন ঘাঁটিতে অজ্ঞাত ঘটনায় একজন প্রকৌশলী নিহত এবং অপর একজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। সেসময় এই ঘটনার আরও বিশদ বিবরণ না দিয়ে এটিকে একটি দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করেছিল দেশটি।
পারচিনে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বলছে, ইরান সেখানে এমন বিস্ফোরক পরীক্ষা চালিয়েছে বলে তারা সন্দেহ করছে যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে ইরান তার ভূগর্ভস্থ নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছিল। ওই হামলায় ইরানি এই পারমাণবিক স্থাপনার সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ইসরায়েল এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে ইসরায়েলি মিডিয়া ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করেছে যে, ইহুদি এই দেশটিই বিধ্বংসী ওই সাইবার আক্রমণ করেছিল যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করে। মূলত গোপন সামরিক ইউনিট বা গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালিত অভিযানগুলোর বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা খুব কমই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে।
এর আগে ২০২০ সালে ইরানে হওয়া অত্যাধুনিক এক হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল তেহরান। ওই হামলার মাধ্যমে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছিল।
ইরান বরাবরই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, পশ্চিমা বহু দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলছে, ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্ত সংগঠিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়েছিল।
জাতিসংঘের শীর্ষ পরমাণু কর্মকর্তা রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, ইরানের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে এবং সেগুলো দিয়ে তেহরান ইচ্ছা করলে ‘বেশ কিছু’ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।