ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোরোর চরের সবজির খ্যাতি দেশজুড়ে। এখানকার কাঁচামরিচ দেশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপেও। ইতোমধ্যে ৬০ জনেরও বেশি কৃষককে নিয়ে তিনটি রপ্তানিকারক টিম করা হয়েছে। সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এ নিয়ে বেশ অগ্রসরও হয়েছে।
বোরোর চরসহ সদর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষে তৈরি হয়েছে বিশাল সবজি হাব বা কেন্দ্র। চোখ যত দূর যায় এলাকাজুড়েই কেবল সবুজ আর সবুজ। সবজি আর সবজি। স্থানীয়রা জানান, নানা জাতের সবজি হয় সেখানে; কাঁচামরিচ, বেগুন, টমেটো, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি।
সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শাক-সবজি বিদেশে রপ্তানি করি আমরা। বোরোর চর থেকে আপাতত এ বছর কাঁচামরিচ দিয়ে রপ্তানি শুরু করবো। কাঁচামরিচ বেশি যায় সৌদি আরবে। তবে ইউরোপেও যায়
সরকারি হিসাবে, গত বছর উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এবার আরও বেশি জায়গাজুড়ে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বোরোর চর ইউনিয়নে শুধু কাঁচামরিচই চাষ হয়েছে ৪২০ হেক্টর জমিতে। ফলন বেশি, লাভও অনেক। তাই দিন দিন বাড়ছে সবজি চাষের এলাকা।
বোরোর চরে নিজের মরিচক্ষেতে কাজ করছিলেন চাষি কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ বছর চার বিঘার মতো জমিতে চাষাবাদ করেছি। ফুলকপি আর মরিচ। এখানে দুই বিঘা জমিতে শুধুই কাঁচামরিচ ।’
কামরুল বলেন, ‘ছয় থেকে সাত মাস এই মরিচ গাছ টিকবে। সেপ্টেম্বরে লাগানো হয়েছে। কিছু মরিচ বিক্রি করেছি। দুই বিঘা জমি থেকে আশা করছি ১০ বা ৭ দিন দিন পরপর প্রতি তোলায় ৫৪ মণ করে মরিচ পাবো। প্রথমে মণ বিক্রি করেছি ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। গত বাজারে কমে হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। আগাম মরিচ হওয়ায় দাম বেশি পেয়েছি তখন। দুই বিঘা জমিতে আশা করি সাত মাসে তিন লাখ টাকার বেশি আসবে। খরচ যাবে মোটামুটি ৮০-৯০ হাজার টাকা।’
কামরুল ইসলামের মতো অনেক চাষিই এখানকার জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এই মরিচ দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। ইতোমধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানান চাষি কামরুল। তিনি বলেন, ‘তিনটি গ্রুপে আমাদের ৬৩ জনের একটি তালিকা হয়েছে। আমরা কাঁচামরিচ রপ্তানি করবো।’
সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফিল্ড অফিসার মিথুন বিশ্বাস ও স্থানীয় কৃষি অফিসের ফিল্ড সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে।
মিথুন বিশ্বাস বলেন, ‘ময়মনসিংহের বোরোর চরে আমি গিয়েছি। সেখানকার কাঁচামরিচ রপ্তানিযোগ্য মনে হয়েছে। এজন্য কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ২০ জন করে ৬৩ জনের তিনটি টিম করেছি। এরপর (ঢাকার) খামারবাড়ি থেকে একটা টিম যাবে, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনেরও একটা টিম যাবে। তারপর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘শাক-সবজি সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদেশে রপ্তানি করি আমরা। বোরোর চর থেকে আপাতত এবছর কাঁচামরিচ দিয়ে রপ্তানি শুরু করবো। কাঁচামরিচ বেশি যায় সৌদি আরবে। তবে ইউরোপেও যায়।’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কিছু লোকজন এসেছিলেন। ভিজিট করে গেছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর তাদের যে প্রক্রিয়া সে অনুযায়ী গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন হলে রপ্তানি হবে। এরকম একটা বিষয় আমি জানি।’
তিনি বলেন, ‘সদর উপজেলায় গত বছর তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। অবশ্য এবার আরও বেশি। ফলন ভালো, লাভও বেশি। এজন্য আমাদের সবজি চাষের এরিয়া ক্রমাগত বাড়ছে। এবার বোরোর চরে শুধু কাঁচামরিচই ৪২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।’
অজপাড়া গাঁয়ের এই সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, এতে কৃষকদের পাশাপাশি কর্মকর্তারাও বেশ খুশি। তারা এটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সহযোগিতা করছেন। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষা এ বিশাল সবজি হাবের ইতিবাচক ও স্বস্তিদায়ক খবরের পাশাপাশি সড়ক অবকাঠামোসহ নানা সংকটও আছে। যেগুলো সমাধানে সরকারের সহযোগিতা চান কৃষকরা।