গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন- আইডিয়ালের মুগদা শাখার সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম খান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদাউস। তবে ওই শিক্ষিকার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তার নামে হিজাব নিয়ে অভিযোগ করেন এ দুই শিক্ষক। বিষয়টি তোলপাড় চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
শিক্ষিকার করা মামলার এজাহারে বলা হয়, শফিকুল ইসলাম খান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তার এক মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী। কলিগ ও ছাত্রীর বাবা হিসেবে শফিকুলের সঙ্গে বাদীর পরিচয়। শফিকুল বিভিন্ন সময়ে তাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিসহ নানা আচরণে উত্ত্যক্ত করতেন। শিক্ষিকা এখনো কেন বিয়ে করেননি সেটা নিয়েও বিরূপ আচরণ করতেন।
প্রথম ঘটনা ঘটে গত ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখ। ওই দিন শিক্ষিকার হাতে থাকা ডাস্টার ও কলম ফেলে দেন শফিকুল। শিক্ষিকা তা উঠাতে গেলে শফিকুল তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। এ ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন শফিকুল। পরে ৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের রুমে মিটিংয়ের সময় শফিকুল জোরপূর্বক ঢুকে উচ্চস্বরে গালাগালি করে বলেন, সপ্তম শ্রেণির ক্লাস টিচার কে? তার এত বড় সাহস! প্রতিদিন আমার মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়! সহকারী প্রধান শিক্ষক মিটিং শেষে এ নিয়ে কথা বলার জন্য শফিকুল শিক্ষিকা ও অন্যদের সঙ্গে বসেন। সে সময় পাশের চেয়ারে বসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদাউস টেবিলের নিচ দিয়ে শিক্ষিকার স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন তারা। সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমার সঙ্গে তার (শিক্ষিকা) ব্যক্তিগত কোনো যোগাযোগই হয়নি। বরং আমার মেয়েকে তিনি লাঞ্ছিত করেছিলেন। সেই কারণে আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। এখন প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তিনি এই সাজানো অভিযোগ এনেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে স্কুল ছুটির পর কান্নাকাটি করে বাসায় আসে। জানতে চাইলে সে বলে, মিস আমাকে হিজাব পরার অপরাধে আধা ঘণ্টার মতো দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এ ঘটনায় আমি হেড স্যারের কাছে অভিযোগ দিই। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। পরে এ নিয়ে মিটিংয়ে আমাকে ডাকা হয়। এর আগে আমি ওই শিক্ষিকাকে দেখিনি। এটা দিবালোকের মতো সত্য। ওনার সঙ্গে আমার কোনোদিন কোনো কথা হয় নাই, দেখাসাক্ষাৎ তো দূরের কথা।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, হিজাব পরে ক্লাসে আসায় গত ৯ এপ্রিল পাঁচ ছাত্রীকে ওই শিক্ষিকা দাঁড় করিয়ে রাখেন। এই শিক্ষিকার কঠিন ভর্ৎসনায় সে সময় কয়েকজন ছাত্রী কান্না করতে থাকে। এসব বিষয় গভর্নিং বডির সভাপতিকে অবহিত করি। পরে গভর্নিং বডির পরামর্শক্রমে মৌখিকভাবে শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও শোকজ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ওই শিক্ষিকা মিথ্যাচার করে থাকতে পারেন। তার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। গত ২৩ এপ্রিল গভর্নিং বডির সভাপতির কার্যালয়ে ডাকা মিটিংয়ে তাকে আমি দেখতে পাই। মুগদা শাখায় তাদের কারোর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়নি।
এসব বিষয়ে মামলার বাদী ও মুগদা শাখার শিক্ষিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আপনাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলব না। এটা আমরা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেব।