বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলে দীর্ঘমেয়াদে ক্রয়াদেশের প্রতিশ্রুতিসহ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলে দীর্ঘমেয়াদে ক্রয়াদেশের প্রতিশ্রুতিসহ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সফরকালে এ-বিষয়ক এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্র্যান্ড গ্যাপ, ফিলিপ ভ্যান হুইসেন (পিভিএইচ) ও ভিএফের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ২২-২৫ নভেম্বর ঢাকা সফর করে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধিসহ অর্থপূর্ণ ও মানসম্পন্ন কাজের সমর্থনে এ সফর করেন তারা। প্রতিনিধি দলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি এম ফে রদ্রিগেজ এবং শ্রম বিভাগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি থিয়া লি।
গতকাল ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত সফরে প্রতিনিধি দলের নেতাদের সঙ্গে ছিলেন ইউএসএআইডির প্রতিনিধি, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন-সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব এবং ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। সফরে অংশগ্রহণকারী মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ছিল গ্যাপ ইনকরপোরেটেড, পিভিএইচ করপোরেশন এবং ভিএফ করপোরেশন। মার্কিন দূতাবাসের দাবি, গ্যাপ ইনকরপোরেটেড, পিভিএইচ করপোরেশন ও ভিএফ করপোরেশন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে প্রতি বছর আনুমানিক ১৮০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য ক্রয় করে। ৷
প্রতিনিধি দলটি ২৪ নভেম্বর বৈঠক করে তৈরি পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সঙ্গে। বৈঠকে বাংলাদেশে শ্রমের মান উন্নত করা ও মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ক্রেতাদের পক্ষ থেকে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে দীর্ঘমেয়াদি ক্রয়াদেশসহ পোশাকের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মৌখিক প্রতিশ্রুতির বার্তা পাওয়া যায়।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া এক পোশাক শিল্প মালিক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হওয়ার মতো মজুরি যেন নিশ্চিত হয়, সেটা তারাও চায়। এছাড়া মোটা দাগে তাদের তিনটি অ্যাজেন্ডা ছিল। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া আরো উদার করা, ট্রেড ইউনিয়ন চর্চাকে উৎসাহ দেয়া এবং মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা।’
ওই মালিক প্রতিনিধি আরো বলেন, ‘ক্রেতাদের পক্ষ থেকে উদাহরণ হিসেবে কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, কম্বোডিয়ার কারখানা মালিকদের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকের মজুরি বাড়ালে ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদে ক্রয়াদেশের মাধ্যমে অগ্রিম বুকিং নিশ্চিত করবে। এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা বলতে চাইছে, বাংলাদেশের কারখানা মালিকরা মজুরি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদি ক্রয়াদেশের নিশ্চয়তা দেবে।’
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া আরেক কারখানা মালিক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কম্বোডিয়ায় ক্রেতারা চুক্তি সই করেছে শিল্প মালিক সংগঠনের সঙ্গে। সেই চুক্তি অনুযায়ী যদি মালিকরা শ্রমিকের মজুরি বাড়ান তাহলে পণ্যের এফওবি মূল্য বাড়ানো হবে। এ উদাহরণ দিয়ে তারা বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের সঙ্গেও চুক্তি ও শর্তসাপেক্ষে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে প্রস্তুত আছে।’
সফর প্রসঙ্গে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে শ্রম অধিকার চর্চার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া শ্রমিকদের টেকসই ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও জেন্ডার সমতাও অপরিহার্য।
মার্কিন দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শ্রমিকদের মঙ্গল নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার, ক্রেতা, নিয়োগদাতা, নিয়ন্ত্রক ও শ্রম ইউনিয়নগুলোর যৌথ দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষিত ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে সমিতি গঠনের স্বাধীনতা ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার শক্তিশালী করার মাধ্যমে শ্রমিক অধিকারের উন্নয়ন ঘটানো।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, শ্রম সংস্কারকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখার যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তা স্বাগত জানায়। শ্রমিকদের স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যোগদানের অধিকার এবং উন্নত কর্মপরিবেশের জন্য যৌথ দরকষাকষির অধিকার শক্তিশালী করতে বাংলাদেশকে আরো উৎসাহিত করে যুক্তরাষ্ট্র।