দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল আটটায় দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারাদেশের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে।
আট ঘণ্টা ভোটগ্রহণের পর এবার গণনার পালা। কী আছে কার ভাগ্যে তা জানতে অপেক্ষায় আছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় জাপা প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘোষণা এসেছে।
নির্বাচনে সারাদেশের ৩৭ স্থানে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে। অনিয়মের ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এক নারী চেয়ারম্যান রয়েছেন।
বিকেলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে তিনটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি নরসিংদী আর বাকি দুটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায়।
ইসির পক্ষ থেকে সাতজনের ভোট বর্জনের তথ্য জানানো হলেও ঢাকা মেইলের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে আটজনের ভোট বর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোট বর্জন করেছেন যারা
দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী চার সংসদ সদস্য প্রার্থী। দুপুর ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোট বর্জনকারীরা হলেন, গণফোরামের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) মোকাব্বির খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক।
কক্সবাজার-৩ আসনে (সদর-রামু-ঈদগাঁও) ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
কেন্দ্রে প্রার্থীকে ঢুকতে না দেওয়া, এজেন্টদের হুমকি ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনএম প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মতিন।
জোর করে ব্যালটে সিল মারা, এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন নড়াইল-২ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী (হাতুড়ি) শেখ হাফিজুর রহমান।
জাল ভোট, কারচুপি, এজেন্টদের মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রার্থী ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী আজ ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কিছু দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে এবং ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের কাজে ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছে। তারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।