বিদায়ের আগে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী চার মাস ১২ দিন পর বিদায় নেবে পাঁচ সদস্যের কমিশন। কিন্তু তার আগেই জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ১০০ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন রয়েছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ইউপি ভোট সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু আদৌ সেটি সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা বলছেন, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস জুড়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে দুই পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। ২রা ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর ১৪ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা। ইসির সামনে ২৩ নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউপি ভোট করার সময় রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে নির্বাচন করা যায়—সেই লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। কেননা সব স্কুল-কলেজ ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে ইসি। এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি থাকায় ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউপি ভোটের তপশিল ঘোষণা করেছে ইসি।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। তার পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তবে বিদায়ের আগে করোনার কারণে নির্বাচনি জটে থাকা কমিশন বিপাকে পড়েছে। বিগত প্রতিটি কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করে গেছে। বর্তমান কমিশন এখন পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের সিংহভাগ সম্পন্ন করতে পেরেছে। বাকি রয়েছে সংসদের উপনির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদের ভোট। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটও করতে হবে। বিদায়ের আগে স্বল্প সময়ে এসব নির্বাচন শেষ করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কয়েক দফা সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত রাখে কমিশন। নতুবা চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে সাড়ে ৪ হাজার ইউপির ভোট পর্যায়ক্রমে শুরু হতো। করোনার মধ্যেও গত ২১ জুন প্রথম ধাপের ২০৪টি এবং স্থগিত ১৬০টিতে ভোট হয় ২০ সেপ্টেম্বর। এছাড়া আগামী ৭ অক্টোবর ১৫ উপজেলা, এক পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলর ও পৌরসভার পাঁচ কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ৮৪৮টি ইউপি, ১০টি পৌরসভা, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের তপশিল ঘোষণা করে ইসি। আগামী ২রা নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ও ১০ পৌরসভার ভোট হবে। সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৫-এর উপনির্বাচনও স্বল্প সময়ে হবে।
দ্রুত নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোট : গত ১১ আগস্ট থেকে নির্বাচন উপযোগী হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ইসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর এই সিটিতে ভোট গ্রহণ হয়। প্রথম সভা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে মেয়াদ শেষ হবে (প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সিটি নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানুয়ারিতে জেলা পরিষদের ভোট : আগামী জানুয়ারি মাসে দেশের জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর কমিশন সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। জানুয়ারির দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান কমিশনের হাতে সাড়ে চার মাস থাকলেও কার্যত সময় আছে মাত্র দুই মাস। কেননা অক্টোবর মাসে বড় পরিসরের কোনো ভোট হচ্ছে না। স্কুল-কলেজে পরীক্ষার কারণে ডিসেম্বর মাসেও ভোট করার সম্ভাবনা খুবই কম। পরীক্ষা থাকায় নভেম্বরের ১৫ দিনের মতো সময়ে ভোট করতে পারবে না কমিশন। শুধু ২৩ নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর, জানুয়ারির পুরোটা মাস এবং ফেব্রুয়ারির ১০ দিনের মতো সময় হাতে আছে কমিশনের। এই স্বল্প সময়ে কীভাবে ভোট করা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং কমিশন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।