আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্য তেলের বাজার। গত শনিবার বিশ্বে পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। উল্লেখ্য, গত প্রায় দুই বছর ধরে সয়াবিন ও পাম অয়েলের বাজার চড়া। দেশের বাজারে দাম কমাতে সম্প্রতি ভোজ্য তেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো হয়। এতে দাম কিছুটা কমে। কিন্তু এখন আবার লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম ।
যদিও সরকার খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা ও পাম অয়েল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্হা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে। সরকারের এ সংস্হাটির হিসেবে গত বছর এই সময় দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২০ থেকে ১২৩ টাকা ও খোলা পাম অয়েল ১০৬ থেকে ১১০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে।
এখনই কেন দাম বাড়ছে দেশের বাজারে? এদিকে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন দেশের বাজারে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বাড়ছে—এ প্রশ্ন ভোক্তাদের? গতকাল রাজধানীর কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা ফরিদুল আলম বলেন, বর্তমানে বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে তা আগের আমদানি করা। এই তেল তো এখন দেশের বাজারেই আছে। তাহলে দাম বাড়বে কেন?
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের বড় রপ্তানিকারক দেশ। তাই তাদের রপ্তানি বন্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা অফিসপ্রধান মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ভোজ্য তেলের বাজারে অভিযান পরিচালনা করব। কেউ কারসাজি করে তেলের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা নেওয়া হবে। তেল নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য মেনে নেওয়া হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর ২৪ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টন খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। বাকি ৪ লাখ টন ব্যবহূত হয় শিল্প খাতে। আর মোট চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে পাম অয়েলের। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ ডলারে, যা এক বছর আগে ছিল ৯৬০ ডলার। আর এক বছর আগে প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিল ১ হাজার ১০ ডলার। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ ডলারে।