আগামী ৬ মাসের মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত সব সরকারি সেবা মিলবে অনলাইনে। এ লক্ষ্যে ডিজিটাল রোডম্যাপের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। ইতোমধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা), ই-পর্চাসহ বেশকিছু সেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে জাতীয় কল সেন্টারের ৩৩৩ নম্বরে যুক্ত হয়েছে ভূমি সেবা। ভূমি মামলার শুনানিও অনলাইনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষামূলকভাবে শিগগির এর উদ্বোধন হবে। এর পরের ধাপে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ব্যাংকগুলোকে ভূমি তথ্যভান্ডারে যুক্ত করা হবে। ফলে জমি রেজিস্ট্রি করা এবং জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত মালিকানা যাচাই করা যাবে।
ভূমিকে প্রযুক্তির মহাসড়কে যুক্ত করার বিশদ কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ভূমি সেবা প্রদান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমাজে নানা অভিযোগ রয়েছে। ভূমিমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এ বিষয়টিকে বাস্তবতার নিরিখে কার্যকর সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সারপ্রাইজ ভিজিট, ব্যক্তি পরিবর্তন কিংবা রদবদল করে এই সংকটের স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারব না। এটি পরীক্ষিত। তাই আমরা সিস্টেমকে পরিবর্তন করার কাজে হাত দিয়েছি। অর্থাৎ জনগণ যখন ঘরে বসে অনলাইনে তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়ে যাবে, তখন হয়রানি-দুর্নীতির পথ বন্ধ হতে বাধ্য।’ ভূমি সচিব বলেন, ‘পুরো ভূমি সেক্টরকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি সফল হলে সরকার যেমন তার সম্পদ ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে, তেমনই জনগণও হয়রানিমুক্ত সেবা অনায়াসে পেয়ে যাবে।’
অনলাইনে শুনানি : মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসি ল্যান্ড অফিসের মিসকেস ও নামজারি মামলার শুনানি থেকে শুরু করে ভূমি সেটেলমেন্ট অফিসের ৩০ ও ৩১ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট ভূমি মামলার শুনানি সরাসরি ছাড়াও ভার্চুয়াল করার উদ্যোগ নিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। যারা সরাসরি না এসে অনলাইনে শুনানি করতে চান, তারা এ সংক্রান্ত ডিজিটাল ফর্মে অনলাইনে শুনানির ঘরে টিকচিহ্ন দিলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে ভার্চুয়াল শুনানির দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। একযোগে সারা দেশে সম্ভব না হলেও বেশির ভাগ ভূমি অফিসে অনলাইনভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ এ সেবার কাজ শুরু করা হবে।
অটো নামজারি : সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সঙ্গে ভূমি অফিসের তথ্যভান্ডারকে যুক্ত করা হবে। যাতে একসঙ্গে একাধিক সেবা ও নানারকম জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রি করার সময় সংশ্লিষ্ট জমির মৌজা ও দাগ খতিয়ানে প্রবেশ করলে জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করা সম্ভব হবে। হালনাগাদ নামজারির তথ্যও জানা যাবে। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর নতুন মালিকানার বিষয়ে নামজারির জন্য মান্যুয়ালি আবেদন করতে হবে না। অটোমেটিক নামজারির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর দলিলের নকল ও নামজারির সার্টিফাইট কপি হাতে পাওয়া যাবে।
বন্ধক জালিয়াতি প্রতিরোধ : জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই জমি একাধিক ব্যাংকে বন্ধক রেখে মোটা অঙ্কের ঋণ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ভুয়া মালিকানা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা তুলে নিয়ে অনেকে বিদেশে অর্থ পাচারসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকে। এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে ভূমি তথ্যভান্ডারকে ব্যাংক সার্ভারে যুক্ত করা হবে। ফলে কোনো ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার আগে অনলাইনে প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট জমির অবস্থানসহ প্রকৃত মালিকানা খুব সহজে যাচাই করা সম্ভব হবে। এটি সফল হলে এ ধরনের জালিয়াতির পথ বন্ধ হবে।
কল সেন্টার : জাতীয় কল সেন্টারের ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সেবা পাওয়া যাবে। এখানে কল করার পর মোবাইল বাটনে ২ চাপ দিলে সরকারি ভূমি সেবাসহ অনলাইনে আবেদন করার তথ্য জানা যাবে। এছাড়া ভূমি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো হয়রানি ও দুর্নীতির বিষয়ে ১৬১২২ নম্বরে কল করে জানানো যাবে। এখানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে ফোন করলে সেবা মিলবে।