কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে কাজ করবে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমশিনার রাউফ মাজাও ও গিলিয়ান ট্রিগস। কক্সবাজারের সঙ্গে তুলনা করলে জীবনযাত্রার দিক দিয়ে ভাসানচরের রোহিঙ্গা প্রকল্পটিকে বেশ ভালো মনে করছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।
ভাসানচর ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। এতে ভাসানচরে অর্থায়ন ও জাতিসংঘের কার্যক্রম শুরুসহ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে হয় আলোচনা। চার দিনের সফরে রোববার ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের পরিচালনা বিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও ও সুরক্ষাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার গিলিয়ান ট্রিগস। সফরের দ্বিতীয় দিনে গত সোমবার তারা ভাসানচরের পরিস্থিতি দেখতে যান।
ভাসানচর ঘুরে আসার পর গিলিয়ান ট্রিগস ও রাউফ মাজাও জানান, কক্সবাজারের চেয়ে ভাসানচরের জীবন-মান আধুনিক। সেখানে অবকাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশ সরকার যে বিনিয়োগ করেছে তারও প্রশংসা করেন তারা। এ বিষয়ে গিলিয়ান ট্রিগস বলেন, ভাসানচরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা সব সময় সরকারের সঙ্গে কাজ করি। কক্সবাজারে আছি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকব। শরণার্থীদের সহায়তা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও জানান, যে রোহিঙ্গারা এখন ভাসানচরে আছেন, আর যারা যাবেন, তারা যেন মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেয়া জরুরি। রাউফ মাজাও আরো বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকাসহ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা যাতে নিশ্চিত করা যায়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। সেখানে খালি জমি আছে, মাছ ধরার সুযোগ আছে। তারা যেন বসে না থাকে। অলস বসে থাকলে মেধার অপচয় হয়। এটা (ভাসানচর) একটা সুযোগ। একে কাজে লাগাতে হবে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, বলপূর্বক যাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানো।
জাতিসংঘ খুব শিগগির ভাসানচরে যুক্ত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাউফ মাজাও বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা সব সময় সরকারের সঙ্গে কাজ করি। কক্সবাজারে আছি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকব। আমরা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করব।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, নিজ দেশে ফিরে যেতে না পেরে ভাসানচরের রোহিঙ্গারা হতাশায় সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভাসানচরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে রোহিঙ্গারা থিতু হবেন বলেও মনে করেন ইউএনএইচসিয়ারের এই দুই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১০ হাজার একর আয়তনের ওই দ্বীপে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ দফায় মোট ১২ হাজার ২৮৪ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরও করেছে সরকার। এই স্থানান্তরের বিরোধিতা করে আসছে জাতিসংঘসহ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। প্রথম দফা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়ার পর জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে পাল্টাপাল্টি বিবৃতিও এসেছিল।