দীর্ঘদিন বিলম্ব করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রোববার (১৪ নভেম্বর) প্রথম দিনে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলেও সারাদেশে ভুল নির্দেশনার প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। প্রশ্নের মধ্যে ভুল নির্দেশনা থাকায় তা হাতে পাওয়ার পর পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। এ কারণে অনেকের ভালো প্রস্তুতি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত উত্তর লিখতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে।
চলতি বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ৫০ নম্বরের এ পরীক্ষার জন্য দেড় ঘণ্টায় দুইটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নপত্রে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে, তার মধ্যে দুটি উত্তর দিতে হবে। আর মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন (এমসিকিউ) ২৫টি থাকবে। এরমধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। ১৫ মিনিটে এর উত্তর লিখতে হবে।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের মধ্যে এ ধরনের ভুল থাকায় উত্তর লেখার সময় বিভ্রান্তিতে পড়ে। অনেকে তিনটি বা চারটি প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। তবে দেড় ঘণ্টার মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর ভালো লিখতে পারেনি বলে অভিযোগ তাদের।
এক ছাত্রী অভিযোগ করে, শিক্ষাবোর্ডের ঘোষণা এক ধরনের আর প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে আরেক ধরনের। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর পিলে চমকে যায়। শুরুতে দেড় ঘণ্টা সময়ের কথা বলে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এ সময়ের মধ্যে ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। পরীক্ষার এক পর্যায়ে স্যারের কাছে জানতে চাইলে তিনি দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন। এর মধ্যে এক ঘণ্টা সময় চলে গেছে। তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেও একটিও ভালো ভালো লিখতে পারেনি বলে জানায় সে।
ওই শিক্ষার্থী বলে, প্রশ্নের মধ্যে ভুল দিকনির্দেশনা থাকায় হলের অনেককে বিভ্রান্তিতে মধ্যে পড়তে হয়েছে। শুরুতে বিষয়টি পরিষ্কার না করায় অনেকের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও ভুল নির্দেশনার কারণে ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি। এ পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার দাবি জানায় সে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস রোববার (১৪ নভেম্বর) রাতে বলেন, এটি আসলে প্রশ্ন ভুল নয়, এসএসসির প্রশ্ন আগেই ছাপানো থাকার কারণে সেসব প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি পরিষ্কার করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, প্রথমদিন সারাদেশে ‘ক’ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে লটারি করে সেট নির্বাচন করা হয়ে থাকে। সেটি আগে কারও দেখার সুযোগ থাকে না। তাই এটিকে ভুল বলা যাবে না বলে দাবি করেন তিনি।
বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড থেকে জানা গেছে, সকল জেলায় ‘ক’ সেটের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়েছে। পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সেট তৈরি করা হলেও সেটি আর বাতিল করা হয়নি। এ কারণে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ জটিলতার তোপে পড়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে বিভ্রান্তিতে পড়ে। ফলে অনেকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও আশানুরূপ উত্তর লিখতে ব্যর্থ হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রোববার রাতে বলেন, আগের প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ফলে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন হলেও তা প্রশ্নের মধ্যে আগের মতো রয়ে গেছে। বর্তমানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা আয়োজন হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উপমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে স্কুলগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর আগে তারা কেন্দ্রের সব পরীক্ষার্থীকে জানিয়ে দেবেন। তারপরও যদি কেউ বিভ্রান্তিতে পড়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলে তবে বেস্ট দুটি উত্তর নির্বাচন করে মূল্যয়ন করা হবে। এ জন্য কাউকে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পরবর্তী পরীক্ষায়ও কী এমন ভুল নির্দেশনার প্রশ্ন বিতরণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষার আগে আমাদের কারও প্রশ্ন দেখার সুযোগ নেই। তাই কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে সেটি আগে থেকে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।