ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ঐতিহাসিক দ্বৈরথ। ঐতিহ্য, অহংকার ও আগ্রাসনের মিশেলে এই ম্যাচকে ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লড়াইও বলা হয়ে থাকে। এশিয়া কাপে সেই লড়াই আজ মাঠে গড়িয়েছে। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আগে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে টিম ইন্ডিয়া। সেখান থেকে দলীয় ৭২ রানে চার উইকেট হারানো দলকে পথ দেখিয়েছেন ইশান কিশান ও হার্দিক পান্ডিয়ার জুটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাহিন আফ্রিদি-হারিস রউফদের বোলিং তোপে ৪৯তম ওভারে ২৬৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। কিন্তু বৃষ্টির বাগড়ায় বাবর আজমরা লক্ষ্য তাড়া করতে মাঠেই নামতে পারেনি। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে যায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই।
২৬৭ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তান যখন ব্যাট করতে নামবে তার আগেই ক্যান্ডি তৃতীয় দফার বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ২০ ওভারের ম্যাচ শুরুর জন্য শেষ সময় রাত ১০টা বেজে ৫৭ মিনিট (বাংলাদেশ সময়)। এই সময়ের আগে বল মাঠে না গড়ালে পরিত্যক্ত হয়ে যাবে ভারত-পাকিস্তান মহারণ।
কার্টেল ওভারের সবশেষ নির্ধারিত সময়ের ভেতরেও ম্যাচ মাঠে গড়াতে পারেনি। ফলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। দুই দলকে এক পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এই ম্যাচে এক পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান।
এর আগে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রোহির শর্মা ও শুভমন গিল ভালো সূচনার ইঙ্গিত দিলেও তা আর সম্ভব হয়নি। চার ওভারে বিনা উইকেটে ১৫ রান তোলার পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ২৩ মিনিট বন্ধ থাকার পর মাঠে গড়ায় দুই দলের লড়াই। বৃষ্টি যেন পাকিস্তানের জন্য সুভাগ্য নিয়ে আসে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শাহিন আফ্রিদির ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন ভারতীয় অধিনায়ক।
এরপর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। আবারো ভারতীয় শিবিরে আঘাত হানেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এই বাঁহাতি পেসারের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেন কোহলি।
সপ্তম ওভারে দলীয় ২৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা ভারত আরো বিপাকে পড়ে শ্রেয়াস আয়ার। টিম ইন্ডিয়ার দুই সেরা ব্যাটার কোহলি-রোহিত দুইজনকেই বোল্ড আউট করে পাকিস্তান সমর্থকদের আনন্দে ভাসান শাহিন শাহ আফ্রিদি।
তৃতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসা শ্রেয়াস আইয়ারও থিতু হতে পারেননি। নিজের নামের পাশে ১৪ রান যোগ করতেই হারিসের বোলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। এরপর চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে আসেন ইশান কিশান। কিন্তু ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওপেনার শুভমন গিল। রউফের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন। ইনিংসের শুরুতেই স্বস্তিতে ছিলেন না এই ব্যাটার। ৩২ বলে ১০ রান করে বোল্ড হন এই ওপেনার।
পঞ্চম উইকেটে ব্যাট করতে আসা হার্দিককে নিয়ে দলের চাপ সামাল দেন ইশান কিশান। এই দুইজনের শতরানের জুটিতে শুরু ধাক্কা সামাল দেয় ভারত। তবে নিজের নিশ্চিত শতক থেকে বঞ্চিত হন এই দুই ব্যাটার।
মিডেল ওভারে টিম ইন্ডিয়া যখন ৩০০ রানের স্বপ্ন দেখছিল ঠিক তখনই হারিস রউফের বলে ব্যক্তিগত ৮২ রানে ক্যাচ আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন কিশান। দলীয় ২০৪ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে।
এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে বড় রানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু ৪৪তম ওভারে সেই শাহিন আফ্রিদি আবারো জোড়া আঘাত হানেন ভারতীয় শিবিরে।
২৩৯ রানে ৫ উইকেট থেকে ২৪২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ভারতের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন ভেঙে যায়। শেষ দিকে জাস্প্রিত বুমরাহ ও কুলদীপ যাদব গুরুত্বপূর্ণ কিছু রান যোগ করেন। পাকিস্তান পেসারদের তোপে শেষ পর্যন্ত ২৬৬ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।
টিম ইন্ডিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করে হার্দিক পান্ডিয়া। পাকিস্তানের হয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। নাসিম শাহ ও হারিস রউফ নেন তিনটি করে উইকেট।