ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় দেশের বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় দেশটির নতুন সিদ্ধান্তে পেঁয়াজের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিল। এবার পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়েছে ভারত। এর ফলে পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ বাড়বে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানিকারকরা দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকদের মোবাইল ফোনে নতুন শুল্কারোপের তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার (২৬ আগস্ট) থেকেই নতুন এই শুল্কায়ন মূল্য কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, এতদিন ১৫০/২০০ মার্কিন ডলার মূল্যে পেঁয়াজের এলসি খুলতাম, সেই মূল্যের ওপর ৪০ ভাগ শুল্ক পরিশোধ করেই পেঁয়াজ আমদানি করতাম । কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। সেটি হলো- যে মূল্যেই এলসি করা হোক না কেন, ভারতীয় কাস্টমসে প্রতি টন পেঁয়াজের ৩২৫ মার্কিন ডলার শুল্কায়ন মূল্য ধরে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ভারতের কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণী সংস্থা নতুন এই শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। আজ শনিবার (২৬ আগস্ট) থেকেই নতুন এই শুল্কায়ন মূল্য কার্যকর হবে বলে ভারতীয় রফতানিকারকরা আমাদের জানিয়েছেন।
এই ব্যবসায়ী বলেন, পুরনো বা নতুন সব এলসির ক্ষেত্রেই এই শুল্কায়ন মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি প্রতি যে প্রকারভেদে ৫-৭ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হতো সেটি বেড়ে ১১ টাকার মতো পরিশোধ করতে হবে। সেটিই ফিক্সড কি না এখনো নিশ্চিত নয়, এটি আজ শনিবার পরিষ্কার হওয়া যাবে।
এর আগে গত শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা টিটুস স্বাক্ষরিত এক নোটিফিকেশনে জানানো হয়, ভারতে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটা বহাল থাকবে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের যে চাহিদা এর একটি বড় অংশের যোগান আসে ভারত থেকে। এজন্য ভারত শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বরাবরই অস্থির হয়ে ওঠে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশীয় নতুন পেঁয়াজ নভেম্বরের আগে উঠবে না বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এজন্য নতুন এই সংকট বিকল্প উপায়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে ভারত ছাড়া আরও নয়টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
গত সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে পেঁয়াজের বাজার কীভাবে সামলাবো সেটা মোকাবিলা করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু ভারত কোনো ধরনের প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা দুঃখজনক। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের উচিত সুযোগ দেওয়া।’
সম্প্রতি ভারত সফর করে আসা ক্ষমতাসীন দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজে রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশেকে অনেক ভুগতে হয়। সম্প্রতি ভারত সফরে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীকে এমনটা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা গমের ক্ষেত্রে আর এমন করবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করবে কি না জানি না।’