যত দিন যাচ্ছে, ভারতে ততই বাড়ছে বাংলাদেশি নারী পাচার ও তাদের জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় নামানোর ঘটনা। সম্প্রতি দেশটির হায়দরাবাদ, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে একাধিক বাংলাদেশি কিশোরী ও নারীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। খবর এনডিটিভির।
রোববার (১৭ আগস্ট) ভারতের হায়দরাবাদ থেকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা এক বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত একমাসে চারজন বাংলাদেশি নারী উদ্ধার হলো। খাইরতাবাদ, চাদেরঘাট ও বান্দলাগুডার বিভিন্ন যৌনপল্লি থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
এর আগে, মহারাষ্ট্রের পালঘরে একটি যৌন র্যাকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোরী জানায়, গত তিন মাসে কমপক্ষে ২০০ জন পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতন করেছে। মানব পাচারবিরোধী ইউনিট (এএইচটিইউ), এনজিও এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং হারমনি ফাউন্ডেশনের যৌথ অভিযানে গত ২৬ জুলাই মীরা-ভায়ন্দর ভাসাই-ভিরার পুলিশ ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে।
মূলত ২০০০ সালের শুরু থেকেই হায়দরাবাদ শহরের যৌনপল্লিতে বাংলাদেশি নারীদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব দেহ ব্যবসায় শুধু বাংলাদেশি নয়, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের নারীরাও পাচার হয়ে আসছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীরা সাধারণত সীমান্ত এজেন্টদের সহায়তায় অবৈধভাবে স্থল বা নৌপথে ভারতে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে স্থানীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে তাদের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়। চাকরির প্রলোভন, উচ্চ বেতনের আশ্বাস এবং ভালো জীবনের প্রতিশ্রুতি দেখিয়েই মূলত এসব নারীকে ফাঁদে ফেলা হয়।
পাচারকারীরা বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের চরম দারিদ্র্যতাকে কাজে লাগিয়ে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শিকার বা মাছ ধরার ছদ্মবেশে অসহায় নারী ও কিশোরীদের টার্গেট করে এজেন্টরা। পরে ভারতে নিয়ে গিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এদিকে সেন্ট্রাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড (সিএসডব্লিউবি) পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, ভারতে বাণিজ্যিক যৌনশোষণের শিকার নারীদের মধ্যে অন্তত ২.৭ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন শহরে এসব পাচারকৃত নারীদের বিক্রি করে দেওয়া হয় দালালদের কাছে।
হায়দরাবাদের আত্তাপুর, বান্দলাগুডা, চিন্তালমেট, হিমায়াতসাগর রোড ও চম্পাপেট এলাকায় পাচারকারীদের সক্রিয় নেটওয়ার্কের কথাও প্রকাশ পেয়েছে।
কুয়েতে ভিক্ষাবৃত্তি, বাংলাদেশিসহ ১৪ নারী আটক
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ, সীমান্ত নজরদারি বৃদ্ধি ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি ছাড়া এ ভয়াবহ মানবপাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়।