লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওয়ার্নারের ক্যাচ যায় স্লিপ অঞ্চলে। তবে সেখানে থাকা বিরাট কোহলি ও শুভমান গিলের ভুলে সেটি বাউন্ডারি হয়ে যায়। সেই ওভারেই আরো দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৫ রান তুলে দুই অজি ওপেনার। ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১৫ রান তুলে উড়ন্ত সূচনার ইঙ্গিত দেয় ট্রেভিস হেড ও ওয়ার্নার। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ শামির বলে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার ওয়ার্নার।
তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জাস্প্রিত বুমরার বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন মার্শ। এরপর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি স্টিভেন স্মিথ। বুমরার সপ্তম ওভারে লেগ বি ফোরের ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। দলীয় ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানো অজিরা চতুর্থ উইকেট জুটিতে ম্যাচে ফিরে।
ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন মিলে ইনিংসের ২০ তম ওভারে দলীয় শতরান পূরণ করেন। এরপর ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হন অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড। লাবুশেনকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটীয় শট খেলে স্বাগতিকদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন হেড।
অজি এই বাঁহাতি ওপেনারের শতকেই ইনিংসের ৩৪তম ওভারে ভারতীয়দের কাঁদিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভীত গড়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। শেষদিকে শতকের পূরণের পর আরো মারমুখী হন হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে অজিদের শিরোপা নিশ্চিত করে শেষদিকে মাঠ ছাড়েন তিনি। হেডের শতকে ৪২ বল হাতে রেখেই ৪৩তম ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতল অজিরা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আজ ভারতের হয়ে সূচনাটা ভালোই করেছিলেন ওপেনার এবং অধিনায়ক রোহিত। স্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে তিনি চড়াও হতে শুরু করেছিলেন অজি বোলারদের উপর। ফলে দ্রুত রান উঠতে শুরু করেছিল ভারতের স্কোরবোর্ডে। তবে রান তলার এ ধারায় বাঁধা পড়ে গিলের আউটে।
চতুর্থ ওভারে স্টার্কের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার মুঠোবন্দী হন গিল। ফলে ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এরপর ক্রিজে রোহিতের সঙ্গী হন বিরাট কোহলি। এ দুজন মিলে দ্রুতই সফল একটি জুটির দিকে এগোচ্ছিলেন। রোহিতের মারকুটে ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৩২ বলেই স্কোরবোর্ডে ওঠে ৪৬ রান। তবে এরপরই আবারো আঘাত হানে অস্ট্রেলিয়া।
দশম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ট্রাভিস হেডের ক্যাচে পরিণত হন রোহিত। ব্যক্তিগত অর্ধশতক থেকে ৩ রান দূরে থাকতেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৪ চার আর ৩ ছয়ে করেছেন ৪৭ রান। অধিনায়ক ফেরার ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আইয়্যার।
তবে সবশেষ দি ম্যাচেই শতক হাঁকানো আইয়্যারও আজ দলের হাল ধরতে পারেননি। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনিও ফিরে যান কট বিহাইন্ড হয়ে। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশের গ্লাভসবন্দী হয়ে ৪ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় তাকে।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে নামা লোকেশ রাহুলকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামল দিয়ে এগোতে থাকেন কোহলি। ইনিংসের ২৬তম ওভারে নিজের অর্ধশতক পূরণ করে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিরাট। তবে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে ব্যক্তিগত ৫৪ রান করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন কোহলি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে রাহুলের সঙ্গে ৩০ রানে জুটি গড়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অলরাউন্ডার জাদেজা। তবে জস হ্যাজেলউডের বলে ৩৬তম ওভারে জস ইংলিসের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। দলীয় ১৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত।
তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে লোকেশ রাহুল সঙ্গী হিসেবে পান সূর্যকুমার যাদবকে। তবে পুরো ইনিংস জুড়ে ধীর গতিতে খেলা রাহুল ৪২তম ওভারে এসে মিচেল স্টার্কের কাছে পরাস্ত হন রাহুল। ১০৭ বলে ৬৬ রান করে দলকে বিপাকে রেখে সাজঘরে ফিরেন তিনি।
শেষ দিকে অজি বোলারদের তোপে পড়ে ভারতীয় ব্যাটাররা। রাহুলের ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজঘরে ফিরেন মোহাম্মদ শামি ও জাস্প্রিত বুমরাহ। দলীয় ২১৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে দ্রুত অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা।
সূর্যকুমার যাদব ও কুলদীপ যাদব মিলে শেষ দিকে আশা জাগানোর মতো কিছুই করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। অজিদের সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন স্টার্ক।
রেকর্ড শতক হাঁকিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন ট্রাভিস হেড।