বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক শুল্ক বৃদ্ধি, যা ভারতীয় রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি এবং প্রথম প্রান্তিকে দুর্বল কর্পোরেট ফলাফলও বাজারের এই খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী।
ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তেল বাণিজ্য নিয়ে অসন্তোষের জেরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলোর জন্য বিশাল ধাক্কা হয়ে এসেছে। ভারতের আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান বোনাঞ্জার বিশ্লেষক নিতান্ত দারেকার বলেছেন, নিফটি৫০-এর মাত্র ৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত, এবং এর বেশিরভাগই আইটি পরিষেবা, যা শুল্কের আওতার বাইরে। তাই পুরো বাজারের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে না।
তবে কিছু নির্দিষ্ট খাত যেমন, রত্ন ও গহনা, বস্ত্র, পোশাক, রাসায়নিক ও অটো যন্ত্রাংশ এই শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই খাতগুলোর মাধ্যমে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার রপ্তানি হয়। এমকে গ্লোবালের শেষাদ্রি সেনের মতে, টেক্সটাইল, কেমিক্যাল ও অটো যন্ত্রাংশ খাতে প্রত্যক্ষ রপ্তানি জড়িত থাকায় তারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
আমেরিকান আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি শিল্প সম্ভাব্য ২৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই শুল্কের কারণে ভারত ইকুয়েডরের মতো প্রতিযোগীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে। একইসঙ্গে ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার অনুযায়ী উৎপাদন স্থগিত রেখেছে। কারণ ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে দেশটি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। এর ফলে রপ্তানি হ্রাস, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং সার্বিক অনিশ্চয়তা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পর থেকে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা গত দশ কার্যদিবসে ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি করে চলেছে। ৭ আগস্টে তারা ভারতীয় বাজার থেকে প্রায় ৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ পুঁজি প্রত্যাহার ইঙ্গিত দেয় যে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির কারণে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন।
শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও যেসব কারণ এই পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে
প্রথম প্রান্তিকে বিভিন্ন কোম্পানির আয় প্রত্যাশিত না হওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভারতের শীর্ষ ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের তুলনায় মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ঋণের চাহিদা কম এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ধীরগতির ইঙ্গিত দেয়।

মার্কিন ডলার সূচক গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডলারের এই শক্তিশালী অবস্থান উদীয়মান বাজারগুলো থেকে পুঁজি প্রত্যাহারকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীরা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে। কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে ভারতের শেয়ারবাজারে আরও ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।