ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র অনেক উন্নত এবং বাকস্বাধীনতাও বেশি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে বিরোধী দল সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা, মাঝেমাঝে রাতের বেলা, সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, যেভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে, তার উদাহরণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নেই। আমি বিএনপিকে বেশি দূরে যেতে বলব না। তারা যেন ভারতের দিকে একটু তাকিয়ে দেখে।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিনি ছোট কারাগার থেকে বড় কারাগারে এসেছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ভারতসহ অনেক দেশের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে উন্নত। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক বেশি। রিজভী কারাগার থেকে বের হয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতেই প্রমাণিত হয় যে বাকস্বাধীনতা এ দেশে নিশ্চিত রয়েছে। তিনি ছোট কারাগার থেকে বড় কারাগারে এসেছেন। তিনি যদি আবার ছোট কারাগারে যেতে চান, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভারতে বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর একটি বক্তব্যের কারণে তার দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। সংসদ সদস্য পদ চলে গেছে। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে যিনি মামলা করেছেন, তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির একজন সদস্য। বিজেপির এমপি ছিলেন। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে বক্তব্য রাখা হয়, সে জন্য কি আমরা আদালতে গিয়েছি? এখান থেকেই বোঝা যায়, তাদের বাকস্বাধীনতা ও দেশে গণতন্ত্র কতটুকু আছে।
এসময়ে চলচ্চিত্র উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বছরে যদি ১০টি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পায়, এতে আমাদের চলচ্চিত্রের ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না। বরং মানুষ হলমুখী হবে, অনেক হল খুলবে, তখন আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য আরও বড় জায়গা তৈরি হবে। আমাদের চলচ্চিত্র উপকৃত হবে।
পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের দুর্দশা থেকে উঠে আসার কথা তুলে ধরতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী জানান, পাকিস্তানে হলের সংখ্যা কমতে কমতে ত্রিশ-পয়ত্রিশটিতে নেমে এসেছিল। তখন তারা ভারতীয় হিন্দি সিনেমা আমদানি শুরু করে দেয়। এরপর হলের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ২০০ হয়েছে। তাদের চলচ্চিত্রের মানও অনেক উন্নত হয়েছে। আমাদের দেশেও ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। সামাজিক সিনেমাও প্রচুর হচ্ছে। সিনেমা থেকে অশ্লীলতা বিদায় নিয়েছে। সামাজিক ও অ্যাকশনধর্মী সিনেমা হচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারি না হলে এরমধ্যে আরও অনেক সিনেমা হল চালু হয়ে যেত। দেশে সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও বাড়ছে।
একটি চলচ্চিত্রের যাদুঘর করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি যাদুঘর হতে পারে। এফডিসিতে নতুন ভবন হওয়ার পর সেটা করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের ফাঁকে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি জানেন খালেদা জিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন? তিনি সাক্ষাৎকার দিয়ে এ কথা বলেছিলেন। তখনকার সাপ্তাহিক পত্রিকা নিপুনে তার বাবা একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে এমন তথ্য দিয়েছিলেন। ২০-২৫ বছর আগের দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমার মেয়ে খুব সাজগোজ করতেন। তার চিত্রনায়িকা হওয়ারও ইচ্ছা ছিল।
শাহজাহান চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হত সাপ্তাহিক নিপুন। মতবিনিময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াত, সদস্য এইচডি রুবেল, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সেক্রেটারি চিত্রনায়িকা নিপুণ, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাস প্রমুখ।