এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সবচেয়ে সফল দুই দল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ১৬তম আসরেও আজ (রোববার) তারা শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে। শক্তিশালী দল নিয়েও দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পাচ্ছে না ভারত। এশিয়া কাপ দিয়ে সেই খরা কাটাতে চায় রোহিত শর্মার দল। এর আগে তারা সর্বোচ্চ ৭ বার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অন্যদিকে, চোট জর্জরিত দল নিয়েও ‘আন্ডারডগ’ তকমা নিয়ে ফাইনালে ওঠে লঙ্কানরা। তাদের সামনে এবার সপ্তম শিরোপা জয়ের সুযোগ।
গত আসরেও ফেভারিটের তালিকায় না থাকা লঙ্কানরা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল। সেবার তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপার উৎসবে মাতে। এবারও বাবর আজমের দলকে হারিয়ে সুপার ফোরের যাত্রা শুরু করেছিল দাসুন শানাকার দল। পরবর্তীতে বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা সর্বোচ্চ ১৩তম বারের মতো ফাইনালে পা রাখে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১তম বার ফাইনালে ওঠে ভারত। শেষ ম্যাচে তারা বাংলাদেশের কাছে ৬ রানে পরাজিত হয়।
শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা বেশ সতেজ। তবে ভারত সর্বশেষ ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল। ঘরের মাঠে তারা এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিশনে নামবে। তার আগে এশিয়া কাপের শিরোপা তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্নকে আরও তাতিয়ে দিতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারতের বেশ দাপট থাকলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের সাম্প্রতিক সাফল্য না থাকায় বেশ সমালোচনা হচ্ছে। শুধু দল নয়, এই ট্রফি সমান গুরুত্বপূর্ণ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছেও। কোচ হিসেবে তার মেয়াদ বাড়বে কিনা, তা এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে ভারতের পারফরম্যান্সের ওপরেই ঠিক হবে।
আগের ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে ভারত বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখেছিল। তাদের প্রায় প্রত্যেককেই আজকের ফাইনালের একাদশে ফিরতে পারেন। তবে ম্যাচে নামার আগে দু’দলেই চোটের সমস্যা রয়েছে। অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে চিন্তিত ভারত তার বদলি হিসেবে ডেকে পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন সুন্দরকে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কাও পাচ্ছে না তারকা স্পিনার মহেশ থিকশানাকে। তার পরিবর্তে দলে নেওয়া হয়েছে অফব্রেক স্পিনার সাহান আরাশিগেকে। এখনও এই স্পিনারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক না হওয়ায় ফাইনালের একাদশে দেখা যেতে পারে আগেই স্কোয়াডে থাকা লেগ স্পিনার দুশান হেমন্তকে।
দুই দলের মন্তব্য
ম্যাচের আগেরদিন ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল জানিয়েছেন, ‘শ্রীলঙ্কা জয়ের স্বাদ পেয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা যেভাবে জিতেছে, সেটা দুর্দান্ত। ফাইনালে ওদের হারাতে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। তবে শ্রীলঙ্কার পিচ অনেকটা ভারতের মতো। সেটা আমাদের সাহায্য করবে। বিশ্বকাপের জন্যও তৈরি হচ্ছি আমরা।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের প্রভাব ফাইনালে পড়বে না বলে মনে করেন ম্যাচটিতে ১২১ রান করা গিল, ‘এশিয়া কাপের ফাইনাল জেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জয়ের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ঠিক সময়ে ছন্দ পাওয়াটা জরুরি। ১-২টা ম্যাচ হারলে চাপ বাড়ে। এশিয়া কাপ জয় বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার কোনও ক্ষতি করবে বলে মনে হয় না। ১০-১৫ রান বেশি দিয়ে ফেলেছিলাম আমরা। সেটা ছাড়া আমরা ভাল খেলেছি। এই ধরনের উইকেটে এমন হতেই পারে।’
শ্রীলঙ্কা এবার টানা দ্বিতীয় এশিয়া কাপ জেতার স্বপ্নে বিভোর। ভারতের বিপক্ষে নামার আগে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে ঠিক সময়ে আমরা ফর্মের তুঙ্গে রয়েছি। ছেলেরা দেশের হয়ে সেরাটা দেওয়ার জন্যে তৈরি। আমরা আন্ডারডগের তকমা নিয়ে খেলতে নেমেছিলাম। প্রত্যেকে নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছে। পর পর দু’বার ফাইনালে ওঠা মুখের কথা নয়। সমর্থকদের থেকে অনেক বার্তা পেয়েছি। ওরা বলছে, তুমি কি এবার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দেবে আমাদের?’
কলম্বোর পিচ দেখেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম একাদশ ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন শানাকা, ‘ম্যাচের একাদশ তৈরি হবে পিচ দেখে। গোটা প্রতিযোগিতাতেই পিচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আমরাও আগের ম্যাচগুলোতে সেভাবেই দল নির্বাচন করেছি। ভারতের বিপক্ষে বোলিং করতে গেলে শুরুতে উইকেট নিতে হবে। তাতে খেলাটা আমাদের জন্যে সুবিধা হবে।’
আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ফাইনালের মহারণে নামবে ভারত-শ্রীলঙ্কা।