চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামি মো. আবদুল আহাদকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ মে) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।
নিহত আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) ফরিদগঞ্জ পৌর সভার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত কিশোর মো. আবদুল আহাদ (১৭) একই এলাকার তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদারের ছেলে। সে শিশু সোহানের গৃহশিক্ষক ছিলেন। পুলিশ শিশুটির মায়ের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে তাকে আটক করে।
জানা গেছে, শিশু আদিল মাহমুদ সোহান গত ১৫ মে সন্ধ্যায় বাড়ি সংলগ্ন মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরে আর ফিরে আসেনি। এই ঘটনার পরদিন শিশুটির বাবা ফরিদগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর চারদিন পরে ১৯ মে সকালে মাটিচাপা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামায় ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, পুলিশের সমন্বিত একটি টিম চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীর গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, গৃহ শিক্ষক আবদুল আহাদ নিয়মিতভাবে ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখত। সে ওই সিরিয়াল সিআইডির কার্যক্রম অনুকরণ করে। গৃহ শিক্ষক আবদুল আহাদের পরিবার অভাবী ছিল। সোহানের পরিবারের কাছে ২৫-২৬ হাজার টাকা জমানো ছিল এই বিষয়টি আহাদ জানতো। সিআইডিতে সে দেখেছে, কাউকে ৪০ সেকেন্ডের মতো নাকে চেপে ধরে থাকলে ওই ব্যক্তি মারা যাবে না। কয়েক ঘণ্টা অজ্ঞান হয়ে থাকবে। কিন্তু শিশুটির ক্ষেত্রে ব্যপারটি কাজ করে না তাই সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে সে শিশুটির মরদেহ মাটিচাপা দেয়। পরে সে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে তাকে খোঁজার নাটক করে। কিন্তু যেখানে শিশুটিকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল কৌশলে ওই স্থানে কাউকে খোঁজাখুঁজি করতে দেয়নি। ১৯ মে যখন মরদেহ পাওয়া গেল তখনও সে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। খুন করার পর সোহানের মাকে ফোন করেছিল ‘তার ছেলেকে পেতে হলে টাকা দিতে হবে’ এ কথা বলতে। কিন্তু খোঁজাখুঁজি কারণে সোহানের মা কলটি রিসিভ করতে পারেনি এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি আবদুল বলতে পারেনি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সোহানের মরদেহ কোদাল দিয়ে মাটি খুড়ে মাটিতে পুঁতে রাখে গৃহ শিক্ষক আহাদ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আহাদের মায়ের ফোন ব্যবহার করে অন্য একটি সিম ব্যবহার করার সূত্র ধরে। এছাড়া তার আচার-আচরণও সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। আমাদের প্রথম থেকেই ধারণা ছিল, হত্যার পিছনে দূরের কোনো ব্যক্তির হাত নেই। কাছের কেউ হত্যার সঙ্গে জড়িত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ।