ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বার্তা পরিবেশিত হচ্ছে। যে কারণে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং বোঝাপড়া গড়ে তোলার ওপড় জোর দিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘জুলাই গণপরিষদ’ আয়োজিত ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পথ চিত্রায়ন: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।
সেমনিারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় সাধারণ মানুষের উপলব্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইস্যুগুলোর প্রতি জনগণের ধারণা মিডিয়া চিত্রায়নে প্রভাব ফেলে। তাই, ভারতীয় নাগরিক সমাজের সদস্য, আমলা এবং সাধারণের সঙ্গে আমাদের আরও বেশি যোগাযোগ এবং সম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভার শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘ইসলামপন্থি’ বা জামায়াতে ইসলামির আন্দোলন হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনের পর এবার হিন্দু তথা সংখ্যালঘুরা বিপদে পড়ে যাবেন এমন যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ না থাকলে হিন্দু জনগোষ্ঠী বিপদে পড়ে যাবে বা ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে এমন বয়ান ভারতের মিডিয়া পাড়াতে খুব জোরেশোরে চলছে। এই বয়ানের ভেতরে যেমন একদিকে বাংলাদেশকে একটি ‘মৌলবাদী’ দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয়, তেমনি আওয়ামী লীগকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ‘ত্রাণকর্তা’ বা বন্ধু রূপে তুলে ধরা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জাহেদ উর রহমান বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা ভয়ংকর রকমের সংকটে আছে, ভারতীয় মিডিয়াগুলো এধরনের ন্যারেটিভ তৈরি করতে চায়। তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ বিষয়ে। আমরা যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি। ভারতের সফট পাওয়ারকে যেন আন্ডারমাইন্ড না করি। ভারতের সিভিল সোসাইটি জনগণের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরীতে কাজ করতে হবে।
গণমাধ্যম তাত্ত্বিক সুমন রহমান বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যখন ক্রিকেট খেলে, তখন কোনো বাংলাদেশি পাকিস্তানকে সমর্থন করলে ভারতীয়রা মন্তব্য করে- ‘তোমাদের একটা দেশ দিলাম। তারপরও তোমাররা এত অকৃতজ্ঞ।’ আমি মনে করি এখানে ভারতের মিডিয়াগুলোও এই ধারণা পোষণ করে। তাদেরকে এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
এএফপির ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মোটা দাগে ডিসইনফরমেটিভ। যেমন- এই আন্দোলনটা ইসলামিস্টদের। এমন ন্যারেটিভ প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো সমাধানের উপায় আছে। ভারতের সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভালো যোগাযোগ নাই। যেটা আছে, সেটা হলো আওয়ামী যোগাযোগ।
