তিনটি লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশকে ৭৩৬ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। এরমধ্যে দেশটি অর্থছাড় করেছে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলার। ছাড় করা ঋণ মোট প্রতিশ্রুতির ডেভেলপমেন্ট-ক্রেডিট লাইনের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এইরমধ্যে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে ভারত।
এদিকে উচ্চপর্যায়ের প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় সভা হয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে। সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব শরিফা খান এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় ভার্মা। ভারত সরকারের বিশেষ সচিব প্রভাত কুমার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিলেন সভায়।
সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
ভারতীয় এই ঋণে মূলত বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ, সড়ক পরিবহন, নৌ পরিবহন, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলখাত উন্নয়ন করা হয়েছে।
তিনটি এলওসির আওতায় মোট প্রকল্প ৪২টি। এরমধ্যে শেষ হয়েছে ১৪টি প্রকল্পের কাজ। ২৭টি প্রকল্প নির্মাণসংশ্লিষ্ট। আট প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান। তিন প্রকল্পে পরামর্শক ও সাত প্রকল্প ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে। এছাড়া ১০ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রথম এলওসি’র আওতায় ২০১২-১৩ সালে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অনুদান (বাজেট সাপোর্ট) হিসেবে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার দেয় ভারত। ফলে ২০১২ সালের আগস্টে ৮০ কোটি ডলারের প্রথম সংশোধিত ঋণচুক্তি সই হয়। এই ঋণে ১৫ প্রকল্পের মধ্যে ১২ প্রকল্প এরইমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে তিনটি প্রকল্পের কাজ চলমান।
অন্যদিকে দ্বিতীয় ঋণচুক্তির আওতায় ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একটি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দুটি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় এলওসির আওতায় নেওয়া হয় ১২টি প্রকল্প। এরমধ্যে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ক্রয় সংশ্লিষ্ট দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। চারটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান, দুটি প্রকল্পে পরামর্শক ও একটি প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে। তিনটি প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে।
এরপর ভারতের সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের এলওসি’র আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি হয়। তৃতীয় এলওসির অর্থ বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করা হয়েছে ১৫টি প্রকল্প।
ইআরডি সচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। তিনটি এলওসি ঋণচুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে এই উন্নয়ন সহায়তা আরও বেগবান হয়েছে। এলওসি’র আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলো সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যৌথ ত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বন্ধুত্বের অন্যতম উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ দুই দেশের সমৃদ্ধি।