জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নে যমুনার নদীর শাখা আড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত চার বছরের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বসতবাড়ি রাস্তাঘাটসহ বাজার। এ বছরেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের মানুষের।
উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পচাবেহলা এলাকা থেকে সাদিপাটি বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, বসতবাড়িসহ ফসলি জমি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার বছর ধরে ভাঙন শুরু হলেও ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
তবে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প পেশ করা হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন হলেই স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানা যায়, যমুনার শাখা আড়াই নদীতে চার বছর আগে থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। বন্যার সময় এ নদীতে পানির তীব্র স্রোত থাকে। প্রতি বছর বন্যার সময় পানির তীব্র স্রোতে ভাঙন শুরু হয়।
গত চার বছরে সাদিপাটি থেকে পচাবেহলা সড়ক, সাদিপাটি বাজার, বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এখন সাদিপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদিপাটি বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদসহ প্রায় ৫০০ বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাদিপাটি বাজার নদীতে ভেঙে বিলীন হয়েছে বাজারে শুধু তিনটি দোকান রয়েছে এখন। তাও ভাঙনের হুমকির মুখে। সাদিপাটি বাজারে পাশে আড়াই নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ বন্যার পানির স্রোতে ছয় বছর আগে ভেঙে গেলেও আরেকটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে।
তবে সাদিপাটি থেকে পচাবেহলা পর্যন্ত সড়ক ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় লোকজন যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। হেঁটে বসতবাড়ির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এখন ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, মসজিদ ও ফসলি জমি।
সাদিপাটি এলাকার পারভীন বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার ঘর নদীতে ভাঙতে শুধু এক হাত বাকি আছে। এক হাত ভাঙলেই ঘর বাড়ি ভেঙে যাবে। আমার আর জায়গা জমি নেই, এ বছরে আল্লাহই জানে কী হয়। কখন যে ভেঙে পড়বে জানি না। রাতে ঘুমাতে পারি না ভাঙনের চিন্তায়।
সাদিপাটি পশ্চিমপাড়া এলাকার সখিনা বেগম বলেন, রাস্তা ভাঙছে, তারপর আমার বাড়ি ভাঙছে নদীতে, টিন দিয়ে ছাপরা ঘর তুলে থাকতাছি। এটাও কখন যেন ভেঙে যায়। আল্লাহ পাক ভালো জানেন। আমার জায়গা জমি নাই আর কোথায় ঘর তুলে কোথায় থাকব?
সাদিপাটি বায়তুলজান্নাত জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আহমদ উল্লাহ বলেন, এই নদীতে গত চার বছর ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভাঙতে ভাঙতে মসজিদের কিনারে এসেছে। মসজিদের পিলার বেরিয়ে এসেছে। এ বছরে নতুন পানি এসেছে, এখন যদি দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে কী হবে জানি না। আমাদের দাবি দ্রুত যেন ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম মিঞা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই নদীতে ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন পেলেই স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন যদি জরুরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা করবো।