সরকার আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও পরিধি বাড়াতে যাচ্ছে। যার আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা অন্তত ১০০ টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি সুবিধাভোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
এসব বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বর্তমান বরাদ্দের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য মোট ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরকার সামাজিক সুরক্ষা-নেট কর্মসূচির জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছিল। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫৫ শতাংশ। আগামী নির্বাচন ও বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় সরকার আসছে বাজেটে এই তহবিল বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ওই খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে সরকার। সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নানামুখী কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। সে কারণে সরকার সামাজিক সুরক্ষায় আলাদা বরাদ্দ রাখছে এবং প্রতি বছরই ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আসছে প্রস্তাবিত বাজেটেও এরই ধারবাহিকতায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করবে সরকার। চলমান মুদ্রাস্ফীতি ও মৌলিক চাহিদা পূরণে ভাতার পরিমাণ অন্তত ১০০ টাকা বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। যদিও বরাদ্দ আরও বৃদ্ধির চেষ্টা ছিল কিন্তু একসঙ্গে বরাদ্দ বেশি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক জনসংখ্যা, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মা, মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারী ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও নগদ ভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে রয়েছে কাজের জন্য খাবার (কাবিখা), কাজের জন্য নগদ অর্থ, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে ৫৭ লাখ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে প্রস্তাব অনুযায়ী সুবিধাভোগী ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হবে। একইসঙ্গে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫৮ লাখে উন্নীত করে বরাদ্দ ৭৬১ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে আগামী বাজেটে।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। যেজন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগামী বাজেট প্রস্তাবনায় যা জনপ্রতি ৬০০ টাকায় উন্নীত করতে যাচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে আগামী বাজেটে ২১৬ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দের প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের বর্তমান বরাদ্দ থেকে আগামী বাজেটে ৫৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত তহবিল দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ লাখ উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এই তহবিলে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৪২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ভাতার পরিমাণও আগামী বাজেটে বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা গেছে।
আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, মোট জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। যা চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা বেশি। বিশাল আকারের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। যেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এনবিআর, এনবিআরবহির্ভূত এবং করবহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে, আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে আগামী বাজেটে। টাকার অঙ্কে বাড়তি ৬০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এছাড়াও এনবিআরবহির্ভূত করের মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আশা করছে সরকার।