তিনভাগ পানি ও এক ভাগ স্থল নিয়ে বাংলাদেশ। আর তার চরম বাস্তবতা যেন দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল তথা বৃহত্তর বরিশাল। এখানে চারদিকে পানি আর পানি। বছরের বেশিরভাগ সময় পানিবন্দি থাকে এ অঞ্চলের মানুষ। এক ফসলি জমির কারণে অভাব–অনটনের মধ্যে থাকতে হত তাদের। তবে সম্প্রতি তাদের সামনে বিকল্প একটি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে প্রকৃতি।
সেটা আর কিছু নয়, ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতি। বর্ষাকালে যখন মাঠ-ঘাট সব ডুবে যায়, কোথাও একখণ্ড শুকনো জমি পাওয়া যায় না, তখন এ অঞ্চলের কৃষকরা এ ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করেন নানা জাতের শাক-সবজি। কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সেই সবজি ক্ষেতই এবার উঠে এসেছে খ্যাতনামা ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স ও গার্ডিয়ানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী বন্যা ও জলাবদ্ধতা প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশের বহু এলাকা বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ফলে প্রায়ই খাদ্য সংকটের কবলে এ অঞ্চলের মানুষ। আর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভাসমান পদ্ধতিতে ব্যাপক আকারে সবজি চাষ করছেন তারা।
মাটি ছাড়া পানিতে চাষাবাদের এ পদ্ধতিকে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিও বলছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, আগৈলঝাড়া উজিরপুর, পিরোজপুরের নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে সবজি চাষ করছেন অগণিত কৃষক। বর্ষায় এসব এলাকার হাজার হাজার হেক্টর নিচু জমি জলে বন্দি থাকে। জলাবদ্ধতা আর কচুরিপানা অভিশাপ কৌশলের কারণে পরিণত হয় আশীর্বাদে।
পানির ওপরে লম্বালম্বিভাবে দুটি বাঁশ বা কলাগাছ ফেলে তার ওপর কচুরিপানার স্তূপ করা হয়। পরে স্তূপ শেওলা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। কেউ কেউ নারকেলের ছোবড়া ব্যবহার করেন। শেওলা পচে শুকিয়ে গেলে তার ওপর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিয়ে লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাকের বীজ বপন করা হয়। আর ঢেঁড়স, লাউ, শসা, শিম, লাফা, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমার, বেগুন উৎপাদন করতে কচুরিপানার ধাপই যথেষ্ট।
উঁচু করে কচুরিপানার ধাপ তৈরি করে রাখার পর পচে গেলে ৫-৭ দিন পরেই তার ওপরে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। ভাসমান সবজি চাষের একেকটি বেড এক মৌসুমের জন্য করা হয়। সবজি চাষ শেষ হলে ওই পচা ধাপ বোরো চাষের আগে জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করেন।