ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ফলাফলের গ্যাজেট স্থগিত করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে এক কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে প্রকাশে সিল মারার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে নৌকা প্রতীকে সিল মারার সময় এক যুবককে বলতে শোনা যায়- ‘সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় মারো’।
ভিডিওটি আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বলে দাবি করেছেন নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট পান। তবে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ৭ নভেম্বর ভোটের ফলাফলের গ্যাজেট প্রকাশ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কাজ শুরু করেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর প্রথম ১০ সেকেন্ডে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের একজন নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনজন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাদেরকে একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। আরেকজন যুবক ব্যালটে বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। আর পাশে থাকা আরেক যুবক ব্যালট ভাজ করছেন।
এছাড়া ভিডিওর ১১ সেকেন্ড থেকে আরেকটি বুথে দেখা যায়— সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এক নারী হাসতে হাসতে ব্যালট পেপারের পেছনে স্বাক্ষর করছেন। তার সামনে তখন পাঁচ-ছয়জন যুবক। ব্যালটে সিলের কালি হয়নি এক যুবকের কথার প্রেক্ষিতে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আরে কালি হইছে’। এ সময় ওই কর্মকর্তার পাশে থাকা এক যুবকের গলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলমের ছবি সংবলিত কার্ড ঝুলছিল। কর্মকর্তার স্বাক্ষর শেষে একে একে ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। আর তারা প্রকাশ্যে একের পর এক ব্যালটে নৌকায় সিল মারেন। তখন এক যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘সিল মারো ভাই সিল মারো’। আরেক যুবক বলেন, ‘নৌকা মার্কায় মারো’।
ভাইরাল ভিডিওটি শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের কিনা- নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুটি বুথের বোরকা পরিহিত নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং শাড়ি ও চশমা পরিহিত আরেক নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ছবি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হলে তিনি শাড়ি ও চশমা পরিহিত নারী তার কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন।
প্রকাশ্যে সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিউল্লাহ জানান, কেন্দ্রে একটু ঝামেলা হয়েছিল। খবর পেয়ে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও এসেছিলেন। তবে প্রকাশ্যে সিল মারা ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই কেন্দ্রে নৌকায় প্রকাশে সিল মারার ভিডিও আমার হাতেও এসেছে। আশুগঞ্জের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই কারচুপি হয়েছে। কোনো কেন্দ্রেই ভোটার ছিল না। কিন্তু ফলাফলে ভোটার দেখানো হয়েছে। তবে যাদের ছত্রছায়ায় কেন্দ্রগুলোতে এসব অনিয়ম হয়েছে, তাদের হাতেই তদন্তের দায়ভার দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমি তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি’।
নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহাজাহান আলম বলেন, ভিডিওটি আমি এখনও দেখিনি। তবে ভোটের সময় তো অনেকেই ব্যাজ পড়ে। যারা ব্যাজ পড়েছে, তাদেরকে আমি চিনি না। আমাদের কোনো কর্মী-সমর্থক এ কাজ করতে পারে না। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল— সরকার এবং দল বিব্রত হয় এমন কিছু করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিডিওর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।