ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। শনিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নন্দনপুরের হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২), সদর উপজেলার কাউসার মিয়া (২৪) ও জোবায়ের (১৪)।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নুরুল আমিন, বাছির মিয়া ও ছাদেক মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে নন্দনপুর বাজার এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে মোদিবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান, সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। তিনজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রানা নুরুস শামস ঢাকা পোস্টকে জানান, সন্ধ্যার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাউসার মিয়া ও জোবায়ের নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় মাদরাসাছাত্র ও স্থানীয়দের বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। এতে ক্যাম্পে থাকা ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত পুলিশ সদস্যদের নাম জানা যায়নি। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ করে অরুয়াইল বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মাদরাসার ছাত্ররা। এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। পরে মিছিল থেকে অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, বিক্ষোভ মিছিল থেকে হঠাৎ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার (২৬ মার্চ) বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর করেন মাদরাসার ছাত্ররা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগও করেন। এরপর শহরের কাউতলি এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়েও হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় আশিক (২০) নামে এক যুবক আহত হন। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আশিক জেলা সদরের দাতিয়ারা এলাকার সাগর মিয়ার ছেলে।
ওই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ২নং ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নূরে আলমসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে নূরে আলমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।