হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। রোববার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এরপর থেকে হেফাজত নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মাদরাসাছাত্ররা জেলা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় দুই সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা ১১টার পর থেকে হরতালকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মিলনায়তন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের কার্যালয় ও বাড়ি এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ছাড়া হরতালকারীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসারস্থ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয় এবং জেলা পুলিশ লাইনে হামলার চেষ্টা চালায়। দুপুর ১২টার দিকে হেফাজত কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় প্রেসক্লাব ভবনের সামনে ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর হামলা চালায় হেফাজত কর্মীরা। তার মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন।
এ ছাড়া সকালে শহরের পৈরতলা এলাকায় হরতালের ছবি তুলতে গেলে আমাদের নতুন সময় পত্রিকার প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফিকেও মারধর করে হরতলকারীরা।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হরতালের সমর্থনে সকাল ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা শহরে মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাজিদুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুবারকউল্লাহ ও শিক্ষা সচিব শামছুল হক।
সকাল থেকেই হেফাজতকর্মীরা শহরের প্রধান সড়কে (টিএ রোড) বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া হরতালের কারণে শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। জেলা সদর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছেড়ে যায়নি।
এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ও স্থানীয় বাসিন্দারা শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে সদর উপজেলার নন্দনপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করে। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রানা নুরুস শামস ওই পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।