আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যালট পেপারের ট্রায়াল হিসেবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ব্যালট পেপারে মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।
এ লক্ষ্যে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী কাগজপত্র সংরক্ষণে ৯টি নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, জাতীয় সংসদের ১৯০ ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন সিল সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষা, ভোটকেন্দ্রে সিল প্রেরণ এবং আইন অনুসারে নির্বাচনী কাগজপত্র সংরক্ষণের পরিপত্র জারি করা হয়েছে। ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী দ্রব্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ, ভোটকেন্দ্রে প্রেরণ এবং ভোটগ্রহণ শেষে ভোটকেন্দ্র হতে সিলগালাকৃত কাগজপত্র ও নির্বাচনী দ্রব্যাদি ট্রেজারিতে সংরক্ষণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন নির্বাচনী দ্রব্যাদি রিটার্নিং অফিসারের নিকট যথাসময়ে প্রেরণ করা অত্যাবশ্যক। নির্বাচনী দ্রব্যাদি জেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো
১। ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা : নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সাথে ব্যালট পেপার জেলা পর্যায়ে নিতে হবে। জেলা পর্যায় থেকে থানা/উপজেলা পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সহযোগে ভোটকেন্দ্রে অন্যান্য মালামালের সাথে নিয়ে যেতে হবে। ব্যালট পেপার বিতরণ ও সরবরাহের সময় নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ নিরাপত্তা প্রদান করবেন।
২। ব্যালট পেপারের গোপনীয়তা রক্ষা : ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মালামাল প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে বিতরণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সকল পর্যায়ে যাতে ব্যালট পেপার গোপনীয়তা রক্ষিত হয় তার
নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৩। ব্রাস সিলের নিরাপত্তা কোড নম্বর : রিটার্নিং অফিসারের নিকট ব্রাস সিল প্রেরণ করা হবে। প্রেরিত সিলে নিরাপত্তামূলক নম্বর (কোড মার্ক) রয়েছে। সুতরাং এই সিলটি প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে বিতরণের সময় কোন ভোটকেন্দ্রে কোন নম্বরের সিল সরবরাহ করেছেন তা বিতরণ রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে এবং সিলের ছাপও নিরাপদ স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
৪। হেসিয়ান ব্যাগ ও গানি ব্যাগের মাধ্যমে নির্বাচনী দ্রব্যাদি প্রেরণ : বিভিন্ন নির্বাচনী মালামাল ভোটকেন্দ্রে সরবরাহের জন্য চটের থলিও প্রেরণ করা হবে। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনী দ্রব্যাদি চটের থলিতে আবদ্ধ করে সিলগালা করতে হবে এবং ভোটগ্রহণ শেষে ওই চটের থলিতেই সিলগালা করে প্রিজাইডিং অফিসারকে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসারের পক্ষে পিতলের সিল (ব্রাস সিল) থলিতে ভরা সম্ভব হবে না। কারণ পিতলের সিলের মাধ্যমে চটের থলি সিলগালা করতে হবে বিধায় পিতলের সিলটি পৃথকভাবে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিতে হবে। অতঃপর পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরাধীনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহকারী রিটার্নিং অফিসার/রিটার্নিং অফিসারের নিকট তা হস্তান্তরের নির্দেশ দিতে হবে। সিলমোহরকৃত চটের গানি ব্যাগ ভোটকেন্দ্র হতে প্রেরণের পূর্বে গানি ব্যাগে ভোটকেন্দ্রের নম্বর ও নাম লিখিত কাগজ দ্বারা সেঁটে দিতে হবে।
৫। নির্বাচনী দ্রব্যাদি ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য সহায়তা : ভোটগ্রহণের পূর্বের দিন প্রিজাইডিং অফিসারদের নিকট মালামাল বিতরণ করার পর ভোটকেন্দ্রে গমনের জন্য ব্যবস্থা করা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ও নির্বাচনী দ্রব্যাদিসহ সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে আসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন বিশেষ করে ভোটকেন্দ্র হতে ফলাফল ও নির্বাচনী দ্রব্যাদি উপজেলা/থানা সদরে নিয়ে আসার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালনরত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সহায়তা নিতে হবে।
৬। নির্বাচনী কাগজপত্রাদি নিরাপত্তা সহকারে সংরক্ষণ : জাতীয় সংসদের ১৯০ ঢাকা-১৭ শূন্য আসনের নির্বাচন শেষে সমস্ত নির্বাচনী কাগজপত্র গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৪২ এর বিধান অনুসারে সংরক্ষণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনী কাগজপত্রাদি সরকারি কোষাগারে (ট্রেজারিতে ডাবল লকে) সংরক্ষণ করতে হবে এবং সংরক্ষণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও রক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। প্রচারণা সংক্রান্ত নির্দেশনা : স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা এবং নির্বাচনী প্রচারণা পোস্টার ব্যবহারে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো বা পোস্টার প্লাস্টিক লেমিনেটেড করে ব্যবহার না করাসহ ইতিপূর্বের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে।
৮। জনস্বাস্থ্য বিবেচনা : জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ভোটকেন্দ্রসমূহে নির্ধারিত চৌহদ্দির মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের দিন রাত ১২টা হতে ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত ধূমপান নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯। সিল সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষা : বিভিন্ন সিল সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষা এবং আইন অনুসারে নির্বাচনী কাগজপত্র সংরক্ষণ ও অনুরূপ বিষয়ে জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে জারিকৃত নির্দেশনা অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।