রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর অবকাঠামো খাত ও জ্বালানি খাত রয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে ৪০ শতাংশ ব্যয়ই দুর্নীতির কারণে লুট হয়েছে। আরেকটি খাত, আইসিটি, যেখানে দুর্নীতির সঠিক চিত্র ধরা কঠিন, কিন্তু এখানে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে।
শ্বেতপত্রে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন ঋণ কেলেঙ্কারি, ভুয়া ঋণ, ঋণের অপব্যবহার ইত্যাদি। ব্যাংক খাতের লুটপাটের টাকার মাধ্যমে ১৪টি মেট্রোরেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিল।
কমিটির প্রতিবেদনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে—
সরকারি বিনিয়োগ: বড় প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির কারণে ব্যয় ৭০ শতাংশ বেড়েছে এবং সময়সীমা ৫ বছর বাড়িয়েছে। গত ১৫ বছরে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে।
খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ধ্বংস: গৃহস্থালির উৎপাদন পরিসংখ্যান বিকৃত করা হয়েছে, বিশেষ করে চাল, তেল এবং গমের ক্ষেত্রে। এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থা: রাজনৈতিক প্রভাবিত ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাংকিং সংকটকে গভীর করেছে। ব্যাংক খাতে ঋণ খেলাপি ও জালিয়াতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
শ্রম অভিবাসন: রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে ১৩ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই টাকা ঢাকার এমআরটি-৬ (উত্তরা-মতিঝিল) প্রকল্পের খরচের চার গুণ। এই সিন্ডিকেট ও শোষণ অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।
সামাজিক সুরক্ষা নেট: সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামে অযথা খরচ লাখ লাখ মানুষকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলেছে। ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাভোগী গরিব হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়নি।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: জলবায়ু অভিযোজন তহবিলে দুর্নীতি পরিবেশগত অবক্ষয় বৃদ্ধি করেছে, যা স্থিতিশীল উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত করেছে এবং জলবায়ু-উদ্ভূত ঝুঁকির বিরুদ্ধে স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলেছে।