চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। আগের মাস নভেম্বর পর্যন্ত ঋণের অঙ্ক ছিল ১৬ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বরেই নেওয়া হয়েছে ২৩৯৪ কোটি টাকা ঋণ। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে আবার ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে। এছাড়া ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এ কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। আবার সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণস্থিতি সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। উল্লিখিত ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে বিপুল অঙ্ক ব্যয়ের পর নিট বিক্রি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে সরকার। কাজেই বাড়তি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে এ ঋণের চাপে যেন বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের যে অবস্থা, তাতে এখন সরকারের ঋণ বাড়লেও সমস্যা হবে না। কিন্তু এর প্রভাব ভবিষ্যতে পড়তে পারে।
জানা গেছে, অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ হিসাবে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছে ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা নেয় সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছিল। এ পরিস্থিতিতে নানা কড়াকড়ির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমানো হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানান, সরকারের বর্তমান ব্যাংক ঋণ চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। তবে শুরুর দিকের তুলনায় এখন বাড়ছে। চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ চাহিদা বেড়েছে। দীর্ঘ সময় পর নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আবার দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে সাধারণভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হয়। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরবরাহ করছে। প্রথম ৬ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে নিট ৩৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দিয়েছে। তবে একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ১৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। সব মিলিয়ে ৬ মাসে নিট ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। সরকারের মোট ঋণস্থিতির মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। বাকি ৯ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।